ঢাকা রবিবার, ২২শে জুন ২০২৫, ৯ই আষাঢ় ১৪৩২


গেল এক বছরে ৫,৫১৪ সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৭,২২১


২৬ জানুয়ারী ২০১৯ ০২:৫৩

এক বছরে ৫,৫১৪ সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৭,২২১

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সারাদেশে মোট ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জন মারা গেছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন। এছাড়া সড়ক, রেল, নৌ এবং আকাশ পথে মোট ৬ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭৯৬ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯৮০ জন।

শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন- ২০১৮ তুলে ধরে সংগঠনটি। এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর রেল পথে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭০টি। এতে মারা যান ৩৯৪ জন, আহত হন ২৪৮ জন। নৌ-পথে ১৫৯টি দুর্ঘটনায় মারা যান ১২৬ জন, আহত হন ২৩৪ জন। এসব দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন ৩৮৭ জন। ২০১৮ সালে আকাশ পথে ৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ৫৫ জন, আহত হন ৩২ জন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, জিটিভি ও সারাবাংলা ডটনেট’র এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ আবদুল হক, সাংবাদিক নেতা কুদ্দুস আফ্রাদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, দুর্নীতির দুষ্টচক্র ও মালিক-শ্রমিকদের আইনের শাসন না মানার প্রবণতা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাছাড়া আমরা দেখেছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তড়িঘড়ি করে পাস করা হলেও সড়ক পরিবহন আইন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে কার্যকর হয়নি। নির্বাচনি ইশতেহারে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের কথা থাকলেও নির্বাচনের পর সড়ক পরিবহনমন্ত্রী এই আইন নিয়ে কোনো কথাই আর বলেননি।

কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, সড়কে নামলে আমরা আইনের শাসনের প্রয়োগ দেখতে পাই না। এমনকি আইনপ্রণেতারাও আইন মেনে চলছেন না। এখনো সড়কে উল্টা পথে ভিআইপিদের গাড়ি দেখা যায়। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে দুর্ঘটনায় আহত বা নিহতের পরিবারকে প্রায় সময়ই ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হয় না। দুর্ঘটনায় রাজীবের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে মারা যাওয়ার পরও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়নি।

দক্ষ ও ন্যূনতম এসএসসি পাস চালক নিয়োগের ব্যাপারে গড়িমসি, পরিবহনের লাইসেন্স ও ইনস্যুরেন্স না থাকা এবং সড়কের চাঁদাবাজিকেও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন বক্তারা। সরকারের স্বদিচ্ছায় দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তারা।

সংগঠনটি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১২ দফ সুপারিশ মালা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো, ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, গির্জায় ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা; টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা; জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাস থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা; রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা, জেব্রাক্রসিং অংকন করা; গণপরিবহন চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা; যাত্রী ও পথচারীবান্ধব সড়ক পরিবহন বিধি প্রণোয়ন; গাড়ির ফিটনেস ও চালদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে আধুনিকায়ন করা; জাতীয় মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা; অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করা; সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠন করে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নকালে চালকের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা ও পর্যাপ্ত মানসম্মত গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেওয়া।

/এ আই