ঢাকা শনিবার, ২১শে জুন ২০২৫, ৮ই আষাঢ় ১৪৩২


আবজাল-রুবিনার সম্পদ জব্দ


২৩ জানুয়ারী ২০১৯ ০৬:৩০

আবজাল-রুবিনার সম্পদ জব্দ

দুর্নীতি’র মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের  বরখাস্তকৃত তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী (সাবেক হিসাব রক্ষণ) আবজাল হোসেন ও রুবিনা খানম দম্পতির  স্থাবর অস্থাবর  সম্পদ জব্দ  করা হয়েছে। দুদকের  অনুসন্ধান কর্মকর্তা সামছুল আলমের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নির্দেশে তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়। অপরদিকে অবৈধ ভাবে সম্পদ অর্জন করার অভিযোগে আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানমকে সম্পদ বিবরনী দাখিল করতে নোটিশ দিয়েছে দুদক। গতকাল দুদক থেকে  দেওয়া নোটিশে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরনী দাখিলের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়।

আদালতে করা আবেদনে বলা হয় আবজাল হোসেন ১৯৯৫ সালে  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল কলেজ স্থাপনের একটি প্রকল্পে প্রকল্প সমন্বয়কারীর কার্যালয়ে অস্থায়ীভাবে অফিস সহকারীর পদে যোগদান করেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে চাকুরী করে তিনি বর্তমানে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) মহাখালীতে প্রশাসনিক কর্তকর্তা পদে কর্মরত আছেন।  তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার পদে ১৯৯৮ সালে কুমিল্লা মেডিলে কলেজ হাসপাতালে যোগদান করে ২০০০ সালে সেচ্ছায় অবসরে যান। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আবজাল ও তার স্ত্রী রুবিনা খানম দেশ বিদেশে বিপুল পারমান সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে যা তাদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ নয়। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, তারা সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তর করে বিদেশে পাচারসহ দেশত্যাগ করে পালিয়ে যেতে পারেন। ইতোমধ্যে এ দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। আবজাল সম্পতির নামে ব্যাংক হিসাব ও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর বা লেলনদেন বন্ধ(ফ্রিজ- ক্রোক করার জন্য  মানিলন্ডারিং  প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর ১৮ উপ ধারা মোতাবেক  আবেদন করা হয়েছে।

 

আবজাল দম্পতির যেসকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ ক্রোক করার আবেদন করা হয়েছে সেগুলো হলো রাজধানীর মিরপুরে বাউনিয়া মৌজায় ২.৫ কাঠা জমির উপর টিনসেড বাড়ি, মিরপুরের পল্লবী থানায়  বাউনিয়া মৌজায় ৬ কাঠা জমি, উত্তরায় ১৫/সি সেক্টরের ২/বি নম্বর সড়কে  ৩ কাঠা জমির দুটি প্লট (নং ২৪ ও ২৬)। এ দুটি প্লট মায়ের নিকট থেকে দলিল সূত্রে দেখালেও মিপুরের পল্লবীর ১ নং বাউনিয়া মৌজায় ৬ কাঠা জমি, খিলক্ষেতে ডোমনী মৌজায় ৩ কাঠা জমি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এন ব্লকে ৪ কাঠার প্লট(নং ১২৫/এ), ফরিদপুরের কোতয়ালী পৌরসভার হাবেলী গোপালপুরে ১০.৫ শতাংশ জমির উপর দ্বিতল বাড়ি, রঘুনন্দপুর মৌজায় ১৩.৫ শতাংশ জমি, ফরিদপুর জেলার টেপাখোলা ইউনিয়নে ১১৩.৩৭ শতাংশ জমি, রাজবাড়ি কেলার বসন্তপুর মৌজায়২২৯.২৫ শতাংশ জমি, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের খালিশপুর বয়রা মোজায় ১৩৯ মুজগুনি আবাসিক এলাকায় ৩ .৩৪ শতাংশ জমি ( বিক্রি করা হয়েছে) এবং খুলনার বয়রা মৌজায় ৫.৪৫ শতাংশ জমি। 

আবজাল ছাড়াও তার স্ত্রী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক স্টোনোগ্রাফার রুবিনা আক্তারের নামে থাকা উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডে ৩ কাঠার বেশি জায়গা নিয়ে ৬ তলার অত্যাধুনিক বাড়ি, একই সেক্টরের ১৬ নম্বর রাস্তায় ৩ কাঠা জমির উপর আরেকটি ৬ তলা বাড়ি, মিরপুরের বাউনিয়া মৌজায় ০২২৪৭.৫ অযুতাংশ জমির উপর টিনসেড বিল্ডিং এবং তার পাশে আড়াই কাঠা জমি, কেরানীগঞ্জে খাজা সুপার মার্কেটে দুটি দোকান (দোকান নং ১ ও ৫), বাড্ডার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে জোহারসাহারা মৌজায় এন আর কমপ্লেক্সে ১১৪৬ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার  ৩০৬৬ ব্লকে  পৃথক ৬  কাঠা জমি, সাভারের বিরুলিয়া মৌজায় ১৫ শতাংশ জমি, ফরিদপুরের কোতয়ালী মৌজায় চর পশ্চিম টোপখোলায় পৃথক ২২.৩০ শতাংশ জমি, ফরিদপুরের কোতয়ালী মৌজায় হাবেলী গোলাপপুরে ৫ শতাংশ জমির উপর দোতালা বাড়ি, হারিয়ান ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি রয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, আবজাল ও তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে যেসব ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে সেগুলোতে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে। ওই একাউন্টগুলো সংশ্লিস্ট ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে থাকবে। আর স্থাবর ও আস্থাবর সম্পতি সংশ্লিস্ট জেলার ডিসির তত্ত্বাবধানে থাকবে। জমি বা বাড়ি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবে না আবজাল দম্পতি। ব্যাংক থেকেও কোন অর্থ উঠাতে পারবে না তারা।

/এসইউএ