বাউফলে নিষিদ্ধ জাটকাসহ আটক বাস ছেড়ে দিলো প্রশাসন
পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা মৎস্য বিভাগের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ জাটকা মাছ পরিবহনের দায়ে আটক একটি বাস ও বাসের স্টাফদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে টানা তিন ঘণ্টার নাটকীয়তা শেষে বাউফল থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয় দশমিনা-বাউফল-ঢাকা রুটের ‘কিংস পরিবহন’ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস। একই সঙ্গে মুক্তি পায় আটক তিনজন বাস স্টাফ।
এ বিষয়ে বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান সরকার যমুনা টেলিভিশনকে জানান, ঢাকাগামী একটি বাস থেকে জাটকা মাছ জব্দের খবর দেয় মৎস্য বিভাগ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং মৎস্য বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস ও স্টাফদের আটক করে। পরবর্তীতে, তাদের সিদ্ধান্তেই পুলিশ আটক স্টাফ ও বাসটিকে ছেড়ে দেয়। তবুও বিষয়টি আমরা জিডি বুকে নোট রেখেছি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত আনুমানিক ৯টার দিকে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বাউফল-ঢাকা মহাসড়কে ‘কিংস পরিবহন’ নামের একটি বাসে তল্লাশি চালান উপজেলা মৎস্য দপ্তরের আনিছুর রহমান নামের এক কর্মকর্তা। বাসটি থেকে বিপুল পরিমাণ জাটকা মাছ জব্দ করা হয় এবং নিষিদ্ধ মাছ পরিবহনের দায়ে বাসের তিন স্টাফসহ বাসটিকে আটক করে থানায় নেয়া হয়। এসময় বাসের যাত্রীরা বিকল্প উপায়ে রাজধানী ঢাকার পথে যাত্রা করেন। এদিকে, জব্দ করা জাটকা স্থানীয় দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণও করা হয়। কিন্তু কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই রাত সাড়ে ১২টার দিকে আটক স্টাফসহ বাসটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে জানান, বর্তমানে তিনি একটি ট্রেনিংয়ে আছেন এবং এ বিষয়ে আনিছুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বাউফল উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা আনিছুর রহমানের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে তার কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম যমুনা টেলিভিশনকে বলেন, বিষয়টি আমি এমন শুনেছি যে, স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক বাসে তল্লাশি করে জাটকা মাছ দেখতে পান। পরে তারা উপজেলা অফিসারকে জানালে তিনি ট্রেনিংয়ে থাকায় আনিছুর রহমানকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। যেহেতু মৎস্য বিভাগের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সুযোগ নেই, তাই বিষয়টি বাউফলের ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে জানানো হয়। পরে শুনেছি মাছ এতিমখানায় দেয়া হয়েছে এবং মুচলেকা রেখে আটক পরিবহন ও স্টাফদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। আনুমানিক ২৫ কেজির মতো জাটকা মাছ জব্দ করা হয়েছিল বলে আমাকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহাগ মিলু জানান, জেলা শহরে বিভাগীয় কমিশনারের মিটিংয়ে থাকাকালীন জাটকা মাছসহ বাস আটকের বিষয়টি জানানো হয়। তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। মিটিং শেষে খোঁজ নিলে জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ কাজ করছে। পুলিশই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, দশমিনা-বাউফল-ঢাকা রুটের বাসগুলোতে নিয়মিত আইন উপেক্ষা করে মাছ পরিবহনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন যাত্রীরা। তবে এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। গত ১ বছরে এই রুটে অবৈধ জাটকা পরিবহনের দায়ে আনুমানিক ১০টি বাসকে জরিমানা করা হয়েছে এবং প্রায় ১ হাজার মণ জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে
