ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের নীরব অনুগত লাভলু সিদ্দিকীর বিএনপির কাছে প্রত্যাশা কী?
মাদারীপুর-১ আসনের রাজনীতিতে এখন এক ব্যতিক্রমী গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, যা নিয়ে আলোচনা চলছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের অন্দরে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা এই আসনের আলোচিত নেতা সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীকে ঘিরে এই জল্পনা। স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি, আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি নেতা হলেও গত প্রায় ১৭ বছর ধরে তিনি শিবচর এলাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের 'নীরব কর্মী' হিসেবে কাজ করে গেছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই 'নীরব আনুগত্যের' পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন এই আসনের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন)। স্থানীয় মহলে জানা যায়, যেকোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত সংকটে লিটন চৌধুরী সব সময় লাভলু সিদ্দিকীর পাশে ছিলেন, যা লাভলুর অনুসারীদের কাছে 'আদর্শিক নেতৃত্ব' হিসেবে বিবেচিত। এই পারস্পরিক সহযোগিতা দীর্ঘমেয়াদী এক 'ক্রস-পার্টি' বোঝাপড়া তৈরি করেছে, যা সাধারণ দলীয় রাজনীতির বাইরে।
প্রশ্ন উঠেছে, লাভলু সিদ্দিকীর এই দীর্ঘ ১৭ বছরের 'নীরব সহযোগিতা'র প্রতিদানের পাত্র হিসেবে তিনি এখন বিএনপির কাছ থেকে কী পেতে পারেন? স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন দেশের রাজনৈতিক সমীকরণ দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, তখন লাভলু সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে বা তার অনুসারীদের মধ্যে বিএনপির সুবিধা নেয়ার আশার একটি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এই প্রত্যাশার কেন্দ্রে রয়েছে ক্ষমতার লোভ এবং ভবিষ্যতের ব্যাপক দূর্ণীতির সুবিধা।
বিশেষত, যখন কঠোর দলীয় আনুগত্য বাইরে থেকে আওয়ামীলীগের হয়ে গত ১৭ বছর কাজ করা সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর মতো একজন বিএনপি নেতার এমন দীর্ঘমেয়াদী 'আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠতা' একটি বিশেষ বার্তা বহন করে। স্থানীয় জনগন মনে করেন, পাচ আগস্টের আগে তিনি বিএনপি-এর রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে অবস্থান করেও আওয়ামী লীগকে মাদারীপুরের ১ আসনে টিকে থাকতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন।
সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর সাথে শিবচর পৌরসভার মেয়র অওলাদ হোসেন খানের সাথে যে এক সাথে পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতিও। তার সাথে আছে মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মনির চৌধূরী।
রাজনৈতিক সমীকরণে লিটন চৌধুরীর ভূমিকা
এই পুরো সমীকরণে নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের ভূমিকা কেন্দ্রীয়। তার মতো প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়া লাভলু সিদ্দিকীকে শুধু রাজনৈতিক সুরক্ষা দেয়নি, বরং এলাকায় তার প্রভাব বজায় রাখতেও সাহায্য করেছে। এই সম্পর্কটি প্রমাণ করে যে স্থানীয় রাজনীতিতে আদর্শিক জায়গায় না থেকে আওয়ামীলীগের সাথে তার রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা কতটা শক্তিশালী হতে পারে। লাভলুর পক্ষে কাজ করা মানে লিটন চৌধুরীর স্থানীয় রাজনৈতিক কৌশলের প্রতি আস্থা রাখা।
অথচ মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন না দেওয়ায় সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন, সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর সমর্থকরা।
সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে বিএনপির পক্ষ থেকে মাদারীপুর-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জামান কামাল নুরুদ্দিন মোল্লার নাম ঘোষণা করা হলে মনোনয়ন বঞ্চিত সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর সমর্থকরা এ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
এ ঘটনার পরপরই লাভলু সিদ্দিকীর সমর্থকরা সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
বিক্ষুব্ধরা কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালান এবং ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মনোনয়নের খবর প্রচার হতেই শিবচর এলাকায় বিএনপি নেতা সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকীর সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে সড়ক অবরোধ করেন। তারা স্থানীয় নেতৃত্বকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে স্লোগান দেন ও অবিলম্বে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তারা অবরোধ তুলে নেন এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এরপর দলীয় দফতর থেকে জানানো হয় যে, অনিবার্য কারণে মাদারীপুর-০১ (শিবচর উপজেলা) আসনের মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, 'মাদারীপুর-এক (শিবচর উপজেলা) আসন এবং উক্ত প্রার্থীর নাম অনিবার্য কারণে স্থগিত রাখা হলো। পরবর্তী সিদ্ধান্ত যথাসময়ে জানানো হবে।
এখন দেখা যাচ্ছে শিবচরের এই ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক সমীকরণে আওয়ামীলগের 'নীরব কর্মী' সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী তার দীর্ঘদিনের ফ্যাসিস্ট আওযামীলীগের আনুগত্যের পর বিএনপির হয়ে টিকে থাকার লড়াই কতদিন চালিয়ে যেতে পারে। যদি লাভলু সিদ্দিক সফল হয় তাহলে মাদারীপুর-১ আসনের ভবিষ্যতে ক্রস-পার্টি রাজনীতির একটি নতুন নজির তৈরি করতে পারে।
