আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি প্রার্থী হতে পারবেন না
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু যুগোপযোগী পরিবর্তন ও নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সংশোধনের গেজেট প্রকাশের পর এবারের জাতীয় নির্বাচনে যুক্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন বিধান। সংশোধিত অধ্যাদেশে ‘না ভোট’ পুনরায় চালু হওয়া থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহারকে নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য করার মত নানা বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী মূল পরিবর্তনগুলো হল-আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি প্রার্থী হতে পারবেন না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ, বিমান ও কোস্ট গার্ড) যুক্ত হয়েছে। একক প্রার্থীর আসনে ‘না ভোট’ ফিরছে। সমান ভোট পেলে লটারির বদলে হবে পুনঃভোট। জোটগত নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে ভোট বাধ্যতামূলক।
এছাড়াও নির্বাচনী জামানত ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হযেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান থাকবে। আইটি সাপোর্টে পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি যুক্ত হয়েছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া হয়েছে। এআই-এর অপব্যবহার নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে নির্বাচিত হওয়ার পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে-এমন বিধান রাখা হয়েছে।
অনুচ্ছেদভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ও পরিবর্তন-
অনুচ্ছেদ ২ : আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেনা, নৌ, বিমান ও কোস্ট গার্ডকে।
অনুচ্ছেদ ১২ : আদালত ঘোষিত ফেরারি বা পলাতক আসামি সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি বা কার্যনির্বাহী পদে থাকা ব্যক্তিও প্রার্থী হতে পারবেন না। ‘লাভজনক পদ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পদকেও সংজ্ঞায় আনা হয়েছে। হলফনামায় দেশ-বিদেশের আয়ের উৎস ও সর্বশেষ ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে।
অনুচ্ছেদ ১৯ : একক প্রার্থী থাকলে ব্যালট পেপারে থাকবে ‘না ভোট’। তবে পুনঃনির্বাচনে ‘না ভোট’ প্রযোজ্য হবে না।
অনুচ্ছেদ ২০ : জোটগত নির্বাচনে প্রতিটি দলকে নিজস্ব প্রতীকে ভোট করতে হবে।
অনুচ্ছেদ ২১ : নির্বাচনী এজেন্ট অবশ্যই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হবে।
অনুচ্ছেদ ২৬ : ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিধান বাতিল করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ২৭ : পোস্টাল ভোটিংয়ের আওতায় প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী এবং দেশের অভ্যন্তরে আটক ভোটাররা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
অনুচ্ছেদ ২৯ : ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৩৬ : ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিত থাকার বিধান যুক্ত।
অনুচ্ছেদ ৩৮ : সমান ভোট পেলে লটারির পরিবর্তে পুনঃভোট হবে।
অনুচ্ছেদ ৪৪ : প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ভোটারপ্রতি ১০ টাকা নির্ধারণ।
দলীয় অনুদান ও ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ বাধ্যতামূলক। নির্বাচন কর্মকর্তাদের বদলিতে উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৭৩ : মিথ্যা তথ্য, গুজব বা এআই অপব্যবহার রোধে প্রার্থী ও দলের বিরুদ্ধে অপরাধের বিধান যুক্ত।
অনুচ্ছেদ ৯০ : দল নিবন্ধন স্থগিত হলে সংশ্লিষ্ট দলের প্রতীকও স্থগিত থাকবে।
অনুচ্ছেদ ৯১ : অনিয়ম প্রমাণিত হলে শুধু কেন্দ্র নয়, প্রয়োজনবোধে পুরো আসনের ফল বাতিলের ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া হয়েছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের দণ্ডের বিধান। হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে ভোটের পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
