বেনাপোল-পেট্রাপোলে সন্ধ্যা ৬টার পর আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, বিপাকে ব্যবসায়ীরা
কোনো পূর্ব ঘোষণা বা প্রস্তুতি ছাড়াই দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে সন্ধ্যা ৬টার পর সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাগজপত্রবিহীন ও চোরাইপণ্যের প্রবেশ ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এতে বন্দরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তজুড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি, বাণিজ্যে স্থবিরতা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে সংগঠনের নেতারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১ আগস্ট দুই দেশের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে বেনাপোল-পেট্রাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) ২৪ ঘণ্টা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেশের সব কাস্টমস হাউসকে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বেনাপোলে সেই সিদ্ধান্ত আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বন্দর ও কাস্টমস কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাবে প্রায়ই প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়। প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি হয় এ বন্দর দিয়ে। সময়সীমা সীমিত হওয়ায় এখন বাণিজ্য কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, সিদ্ধান্তের পর থেকে দুই দেশের সীমান্তে দেড় হাজারেরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে। এসব ট্রাকে রয়েছে ফল, সবজি, মাছ, কসমেটিকস, রাসায়নিক কাঁচামালসহ দ্রুত পচনশীল পণ্য—যেগুলোর অনেক কিছুই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করত, সেখানে এখন তা কমে ১৮০-২০০ টিতে নেমে এসেছে।
আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির হিসাবে, প্রতিদিন প্রায় ১০০-১৫০ কোটি টাকার পণ্য খালাস আটকে থাকায় ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সরকারও প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, “পূর্বঘোষণা ছাড়া হঠাৎ সন্ধ্যার পর বন্দর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা হতবাক। দুই পাশে শত শত ট্রাক আটকে আছে, কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চললে ব্যবসায়ীরা বিকল্প হিসেবে অন্য বন্দর ব্যবহার করতে বাধ্য হবে।”
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “বাংলাদেশের একতরফা সিদ্ধান্তে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন। দুই দেশের বাণিজ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।”
বেনাপোল ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, “সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ী, শ্রমিক, এমনকি সরকারও।”
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, “কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে বৈঠকে সন্ধ্যা ৬টার পর কার্যক্রম বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা বলেছিলাম বিষয়টি সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জানানো হবে, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, “আমরা বন্দর পরিচালনা করি, তবে কাস্টমসের অনুমোদন ছাড়া কোনো পণ্য খালাস সম্ভব নয়। হঠাৎ নেওয়া এই সিদ্ধান্ত রাজস্ব ও বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”
তবে কাস্টমসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সমন্বয়ের কারণে সাময়িকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।”
