ঢাকা শনিবার, ১১ই অক্টোবর ২০২৫, ২৭শে আশ্বিন ১৪৩২


দেনার দায়ে নবজাতককে বিক্রি করলেন মা, ক্লিনিক মালিকের ৬ মাসের কারাদণ্ড


২ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:১৮

সংগৃহীত

ঝিনাইদহে দেনার টাকা পরিশোধ করতে সদ্য প্রসূত ছেলে সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছেন মা সুমাইয়া খাতুন। বিনিময়ে মিলেছে হাসপাতালের বিল পরিশোধ ও নগদ ৬৫ হাজার টাকা। আর এতে সহযোগিতা করেন ক্লিনিকের নার্স ইসমোতারা।

 

বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার (১আক্টবর ২০২৫) বিকেলে পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়।

 

এ সময়, হাসপাতালটির কাগজপত্রে ত্রুটি ও হাসপাতালের পরিবেশ ভালো না থাকায় মালিক সেলিম রেজা বাবুকে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং শিশু সন্তান বিক্রির সহযোগিতাকারী হিসেবে নার্স ইসমোতারাকে আটক করে পুলিশ।

 

এর আগে, গত মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নেপার মোড়ের পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটে। সুমাইয়া খাতুন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের আনছার মোড়ের সাত্তার আলীর ছেলে মৃত আলামিনের স্ত্রী।

 

সুমাইয়ার পরিবারের সদস্যরা জানান, ৪ মাসের গর্ভবতী থাকা অবস্থায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে সুমাইয়া খাতুনের স্বামী আলামীন মারা যায়। এরপর থেকে সুমাইয়া জীবনে নেমে আসে চরম সংকট। স্বামী কিংবা পিতা কোনো বাড়িতেই ঠাঁই মেলেনি তার। অবশেষে বৃদ্ধা নানির বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি।

 

পরে মঙ্গলবার দুপুরে প্রসব বেদনা উঠলে এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে স্থানীয় এক ক্লিনিকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তান জন্মদেন সুমাইয়া। পরে অভাবের তাড়নায় সদ্যপ্রসূত সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বিনিময়ে মিলেছে হাসপাতালের বিল পরিশোধ ও কিছু নগদ টাকা।

 

নবজাতকের মা সুমাইয়া খাতুন জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর গর্ভাবস্থায় কোথাও ঠাঁই পাইনি। গর্ভবতী অবস্থায় লোকের কাছে ধারদেনা করে করে চলেছি। ক্লিনিকের খরচ, সন্তান মানুষ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সেই কারণে নবজাতক সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছি। তিনি আরও বলেন, যারা দত্তক নিয়েছে তাদেরকে আমি চিনি না, শুধু শুনেছি তাদের বাড়ি কুমিল্লায়।

 

এ ঘটনায় পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক সেলিম রেজা বাবু জানান, সিজারের পর রোগীর দেখাশোনা ছাড়া আমার করার কিছু নেই। রোগী যদি কারও সাথে আপস করে সন্তান দিয়ে দেয় সেটার জন্য আমি দায়ী নই।

 

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদিজা আক্তার জানান, ক্লিনিকের কাগজপত্রে ত্রুটি ও হাসপাতালের পরিবেশ ভালো না থাকায় পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক সেলিমকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও শিশু বিক্রির সহযোগিতাকারী নার্সকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।