রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে ২ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত কমপক্ষে ৫০

রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুইজন মারা গেছেন। একই সময়ে অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অন্তত ৫০ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। তবে অ্যানথ্রাক্সের কারণে ওই দুজনের মৃত্যু হয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
মারা যাওয়া দুজন হলেন- উপজেলার পীরগাছা ইউনিয়নের আবদুর রাজ্জাক (৪৫) ও পারুল ইউনিয়নের আনন্দী ধনীরাম গ্রামের কমলা বেগম (৬০)।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পীরগাছা উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বলছে, ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করা গেছে। এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞ একটি দল গত রোববার ঘটনাস্থলে এসে পরীক্ষার জন্য অসুস্থ গরুর মাংস নিয়ে গেছেন।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত বলেন, অ্যানথ্রাক্সের বিষয়টি বেশ কয়েক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। মাসখানেক আগে কিছু গবাদিপশুর শরীরে এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয় ও মারা যায়। ওই গবাদিপশুর মাংস কাটাকাটি করা থেকে অ্যানথ্রাক্স রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। পরে প্রাণিসম্পদ বিভাগ নমুনাগুলো পরীক্ষা করে গত সপ্তাহে জানিয়েছে, মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। যে রোগীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন, তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৪ থেকে ১৫ জন রোগী অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসা নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন এই কর্মকর্তা।
তবে পীরগাছা সদর, তাম্বুলপুর, ছাওলা ও পারুল ইউনিয়নে ঘুরে অন্তত ৫০ জন রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। তারা কেউ চিকিৎসাধীন, কেউ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা বলছেন, দুই মাস আগে উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। তাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য বিভাগ সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা যান উপজেলার পীরগাছা ইউনিয়নের তালুক ইসাত গ্রামের ভ্যানচালক আবদুর রাজ্জাক (৪৫)।
রাজ্জাকের স্ত্রী ফেনসী বেগম বলেন, তার চাচা শ্বশুর মুকুল মিয়ার একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটি জবাই করে আবদুর রাজ্জাককে কাটাকাটির জন্য ডাকা হয়। মাংস কাটাকাটির সময় রাজ্জাকের একটি আঙুল কেটে যায়। পরে বিকেল থেকে রাজ্জাকের জ্বর শুরু হয়। একই সঙ্গে হাত, কানের নিচে ও বুক ফুলে যায়। তিন দিন পর রাজ্জাক রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আনন্দ ধরিরাম গ্রামের সিরাজুল ইসলামের একটি অসুস্থ গরু জবাই করা হয়। এই অসুস্থ গরুর মাংস কাটাকাটি ও খাওয়ার কারণে সিরাজুলের স্ত্রী রাজিয়া (৪৫), ভাতিজা ফেরদৌস, ভাতিজার স্ত্রী রিয়া মনি এবং পাশের গ্রামের ৮ থেকে ১০ জন অসুস্থ হন। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘা দেখা দেয়। এর মধ্যে ৬ সেপ্টেম্বর কমলা বেগমকে (৭০) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান।
কমলা বেগমের নাতি সুমন মিয়া বলেন, তার দাদি ছাড়াও বাবা দুলাল হোসেন ও তার আড়াই বছরের ছেলে আসাদুজ্জামান একই সঙ্গে অসুস্থ হন। তাদের বাড়ি থেকে ওই গরুর মাংসের নমুনা নিয়েছিল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। কয়েক দিন আগে তারা এসে ওই মাংস পুঁতে রাখেন ও খেতে নিষেধ করেছেন।