ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯শে আগস্ট ২০২৫, ৫ই ভাদ্র ১৪৩২


তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ উদ্বোধন কাল


১৯ আগস্ট ২০২৫ ১১:৪৩

সংগৃহীত

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা গার্ডার সেতুটি অবশেষে আগামীকাল বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুর ১২টায় উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এদিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গাইবান্ধায় সেতুস্থলে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধন করবেন।

 

এলজিইডির বাস্তবায়নাধীন ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ইতোমধ্যে ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।

 

সেতুটি উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্নের কথা জানিয়েছেন গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী। তিনি বলেন, সেতুটির নামকরণ ইতোমধ্যে ‘মাওলানা ভাসানী সেতু’ করা হয়েছে।উদ্বোধনের পর বিকেল থেকে সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

 

তিনি আরও জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলজিইডির প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া, চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের কর্মকর্তাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।

 

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। ১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯.৬ মিটার প্রস্থের সেতুটির লেন সংখ্যা ২টি এবং মোট স্প্যান সংখ্যা ৩১টি। প্রকল্পে সংযোগ সড়ক ও নদী শাসনসহ প্রায় ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

 

এলজিইডির তত্ত্বাবধানে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন কাজটি বাস্তবায়ন করেছে। এটি একটি প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার সেতু। এই সেতুটি বর্তমানে এলজিইডির আওতায় নির্মিত দেশের মধ্যে বৃহত্তম সেতু।

 

অপরদিকে, উদ্বোধনের আগেই সেতু দেখতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন সেতুর দুই প্রান্তে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ায় উচ্ছ্বাসে ভাসছে দুই জেলার লাখো মানুষ। সেতুটির মাধ্যমে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে স্বল্প সময় ও খরচে শিল্প ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন এবং ছোট ও মাঝারি কলকারখানা প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মত বিশেষকদের।

 

বামনডাঙ্গা থেকে সেতু দেখতে আসা সোহান মিয়া বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেতুটি দেখতে এসে খুব ভালো লাগছে। এখানে এসে সেতু এলাকাটি ঘুরে দেখলাম, নদীতে নৌকায় ঘুরলাম, সব মিলিয়ে বেশ আনন্দ লাগছে।

 

হরিপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া বলেন, এই সেতুর ফলে আমাদের যোগাযোগ যেমন সহজ হবে, তেমনি জীবনমানেরও উন্নতি ঘটবে। আগে আমরা নৌকায় চলাচল করেছি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। সেই ভোগান্তির অবসান হচ্ছে সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে।

 

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন হলেও নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন আটকে ছিল কাজ। অবশেষে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয়। বর্তমানে মূল সেতুর কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। কেবল উত্তর পাশে আর্চ ব্রিজ ও কিছু সংযোগ সড়ক পাকাকরণ বাকি রয়েছে। তবে বাকি কাজ দ্রুতই শেষ হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।