ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫, ৪ঠা আষাঢ় ১৪৩২


ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জটিল সমীকরণে ভোট মিত্রদের নিয়ে জোট বা সমঝোতা করতে পারে বিএনপি * জোট করার চেষ্টায় জামায়াতও, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এনসিপি * বিরোধী দল হওয়া নিয়ে নাটকীয় কিছু ঘটতে পারে : অভিমত বিশ্লেষকদের


১৭ জুন ২০২৫ ১০:১৬

ফাইল ফটো

জটিল সমীকরণে ভোট

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জটিল সমীকরণে রূপ নিচ্ছে ভোটের রাজনীতি। দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়ার পর এখন দৃশ্যপটে নেই আওয়ামী লীগ। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর হিসাব-নিকাশও নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিকে ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলগুলো।

 

বড় দল বিএনপি ভোটের হিসাবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। তবে বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে একসঙ্গে থাকা মিত্র দলগুলোকে নিয়ে সামনেও চলতে চায় দলটি। সেক্ষেত্রে মিত্রদের সঙ্গে নির্বাচনি জোট বা সমঝোতা করার সম্ভাবনা বেশি বিএনপির। আবার জামায়াতও ইসলামপন্থি দলগুলো নিয়ে ‘নির্বাচনি ঐক্য’ গঠনের চেষ্টা করছে। তবে মতাদর্শিক দূরত্বের কারণে জামায়াতের সঙ্গে বড় ইসলামি দলগুলোর ঐক্য নিয়ে সংশয় রয়েছে।

 

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনসহ ৫টি ইসলামি দল অনেকটা সমঝোতার পথে। আবার এবি পার্টির সঙ্গে এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি দলের হতে পারে ‘অ্যালায়েন্স’। মতাদর্শিক দূরত্বের কারণে জামায়াতের সঙ্গে বড় ইসলামি দলগুলোর ঐক্য না হলে এনসিপিসহ ইসলামপন্থি কয়েকটি দলের সঙ্গে হতে পারে ‘সমঝোতা’।

 

বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলের মধ্যেও একটা ঐক্য তৈরি হতে পারে। আবার বিএনপির জোটে এনসিপিকেও দেখা যেতে পারে। জোট বা সমঝোতা নিয়ে পর্দার আড়ালে দলগুলোর নানা তৎপরতা চলছে। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর সবকিছু দৃশ্যমান হবে।

 

এদিকে আগামী নির্বাচনের পর বিরোধী দল কে হবে-তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। তবে বিরোধী দল হওয়া নিয়ে নাটকীয় কিছু ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

 

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী এককভাবে বা বিএনপির বাইরে কোনো জোট গঠন করলেও ভোটের মাঠে সেভাবে সুবিধা নাও করতে পারে। সেক্ষেত্রে জামায়াত অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায়ও তাদের প্রার্থীদের জয়ী হতে বেগ পোহাতে হতে পারে।

 

কারণ কিছু আসনে জামায়াতের ভোট বেশি থাকলেও সেখানে যদি বিএনপির ধানের শীষ ও আওয়ামী লীগপন্থি কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়, তাহলে ভোট তিন ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের প্রার্থী জয়ী হওয়া কঠিন হবে। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ যতই ফ্যাসিস্ট হিসাবে চিহ্নিত হোক না কেন, আমাদের দেশে ভোটের রাজনীতি বড়ই বিচিত্র ও কঠিন। মানুষ ভোটের সময় অনেক কিছু মনে রাখে না।

 

এছাড়া বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ সারাক্ষণ রাজনৈতিক চর্চার মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করে। এসব বিবেচনায় তফশিল-পরবর্তী পরিস্থিতি অনুমান করলে এটিই প্রতীয়মান হবে যে, ওই সময় সমাজে আওয়ামী ঘরানার ইমেজসম্পন্ন ব্যক্তিদের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানো হতে পারে। বাস্তবে এরাই হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এর ফলে কিছু এলাকায় ভোট রাজনীতির সমীকরণ পালটে যেতে পারে। আর ভোট যেহেতু অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে, সেহেতু কম ভোটের ব্যবধানে নাটকীয় জয়-পরাজয় ঘটতে পারে।

 

পর্যবেক্ষকরা আরও মনে করেন, দেশের বিগত নির্বাচনে ভোটের ইতিহাস দেখলে দোদুল্যমান ভোটারদের বেশির ভাগ ভোট পড়েছে ‘ধানের শীষ’ ও ‘নৌকা’ প্রতীকে। যেহেতু আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে নেই, তাই ধারণা করা হচ্ছে এসব ভোট ধানের শীষে যাবে, অথবা আওয়ামী লীগপন্থি কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে সে পাবে। এখানে ইসলামপন্থি দলগুলোর বাক্সে দোদুল্যমান ভোট ততটা যাওয়ার রেকর্ড নেই। কারণ তাদের ভোট অনেকটা ‘ফিক্সড’।

 

সে কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধী দল নিয়ে নাটকীয় কিছু ঘটতে পারে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, নিবন্ধনও স্থগিত। ভোটে অংশ নিতে হলে স্বতন্ত্র অথবা অন্য কোনো দলের প্রতীকেই তো নিতে হবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে এখন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি-এ তিন দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।

 

আবার এর মধ্যে দুই দল একসঙ্গে ফ্রন্ট করতে পারে। আর তারেক রহমান তো আগেই বলেছেন জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করবে।’

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করেছে। আমরা বলেছি, জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকা দলগুলো নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ করব। এখনো নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়নি। সাধারণত তফশিলের পর জোট বা নির্বাচনি সমঝোতা-যাই বলা হোক না কেন, তা হয়ে থাকে। সব দলের সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক আছে। তবে এখনো এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক কিছু হয়নি।

 

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের যুগান্তরকে বলেন, ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আলাপ-আলোচনা চলছে, কীভাবে কী করা যায়। অনেকে প্রার্থী ঠিক করেনি, নির্বাচনটা ঠিক কীভাবে হবে-অনেকগুলো বিষয় আছে। ঐকমত্য কমিশনের ‘জুলাই সনদ’ ফাইনাল হলেই তখন এর অগ্রগতি বোঝা যাবে। সময় গেলে তা আরও স্পষ্ট হবে।

 

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এনসিপি এখনো নিজেদের স্বাতন্ত্র রক্ষা করে কাজ করে চলছে। নির্বাচনের জোট হবে কী হবে না তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়নি। যদি বাস্তব পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে দলীয় আদর্শ ও কর্মসূচি মিলের কথাগুলোকে বিবেচনায় রেখে জোটের সম্ভাবনাকে আমরা একেবারেই নাকচ করি না। তবে এখনো জোটের বিষয়ে এনসিপি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি।