ঢাকা সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১


পুলিশ প্লাজায় নিষিদ্ধ এমএলএম 'অতিথি ডটকম'


১৬ মার্চ ২০২৪ ১৯:৫৮

ছবি : নতুন সময়

আবারো গজিয়ে উঠছে নিষিদ্ধ ব্যবসা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম)। সুযোগ পেলেই এক শ্রেণীর প্রতারক বিনিয়োগের বিপরীতে দ্বিগুন মুনাফার লোভ দেখিয়ে সর্বনাশা এ ব্যবসায় মেতে উঠে। হাজার হাজার মানুষের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিথি ডটকম নামের এক মাল্টি লেভেল কোম্পানির। ইতিমধ্যে এ কোম্পানিটি ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে আড়াই হাজার করে মোট ৫ কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ করা হলেও সাইফুল ইসলাম সোহেল নামের এক ব্যক্তি অতিথি ডটকম নামের এ মাল্টি লেভেল কোম্পানি পরিচালনা করছেন।

সাইফুল অপর আরেক অধুনালুপ্ত কোম্পানি ডেসটিনির একজন পিএসডি গ্রাহক ছিলেন। রাজধানীর নিকেতনে পুলিশ প্লাজায় অফিস নিয়ে চলছে তার এ বাণিজ্য। পুলিশ প্লাজার মত স্পর্শকতার একটি স্থানে নিষিদ্ধ এ কারবার নিয়ে জনমনে উঠেছে ব্যাপক প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুবিধা নিতেই এ স্থান তারা বেছে নিয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, যেখানে সরকার নিষিদ্ধ এ ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছে সেখানে এটা চলার কোন সুযোগ নেই। আর পুলিশ প্লাজায় এ ধরনের ব্যবসা চলতেই পারেনা। আমরা বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশ বাহিনীর স্থাপনায় অফিস খুলে অনলাইন বুকিং এর আড়ালে চলছে এই এমএলএম ব্যবসা। মাত্র ছয় মাস বয়সের এই প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে সারাদেশে বিশ হাজার এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। যার মোট অংক দাঁড়ায় ৫ কোটি। দেশের বিশকোটি জনগনকে এজেন্ট হিসেবে তাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। তার অর্থ দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি কয়েক হাজার কোটি টাকা হাঁতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পেতেছে।


সরেজিমন দেখা যায়, গুলশান পুলিশ প্লাজার টাওয়ার ওয়ান বিল্ডিংয়ের লিফটের আট ধরলেই পাওয়া যাবে একটি অফিস। নাম অতিথি ডটকম। অভিযোগ উঠেছে অনলাইন বুকিং এর আড়ালে এখানে চলে এমএলএম ব্যবসা। এরই মধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

অতিথি ডটকমের কার্যক্রমের খোঁজ নিতে গেলে জানা যায়, তারা বাসা বাড়ি থেকে শুরু করে হোটেল গাড়ী এমনকি বিমান পর্যন্ত তাতের মাধ্যমে বুকিং দেয়া যাবে। কিন্তু ভেতরে রয়েছে এমএলএমএর কার্যক্রম। গুগল প্লেস্টোরে যেয়ে দেখা যায় অতিথি ডটকমের এ্যাপ ডাউনলোড করার পরে ভেতরে আর প্রবেশ করা যায়না। তার কারণ প্রবেশ করতে লাগবে রেজিস্ট্রেশন। আর এই রেজিস্টেশন এবং এই প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট ট্রেনিং বাবদ একেকজনকে দিতে হবে আড়াই হাজার টাকা। মূলত প্রত্যকে মানুষের এই আড়াই হাজার টাকা আদায় করাই তাদের মূল টার্গেট।


অতিথি ডটকমের মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান সৈয়দ মহিউদ্দিন অতিথি ডটকম যে এমএলএম ব্যবসার সাথে যুক্ত তা স্বীকার করেন প্রতিবেদকের কাছে।

তিনি জানান, মাত্র ছয় মাসের মধ্যে শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত বিশ হাজার মানুষ এজেন্ট হিসেবে রেজিস্টেশন করেছে। যাদের দেশের বিভিন্নস্থানে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। আর ট্রেনিং এ শেখানো হচ্ছে নতুন এজেন্ট কি করে তৈরী করতে হবে। প্রতি এজেন্ট নতুন এজেন্ট যুক্ত করতে পারলে মিলবে পাঁচশ টাকা। এভাবে যে যত বেশী এজেন্ট নিয়োগ করাতে পারবে সে পাবে বেশী টাকা। এরই মধ্যে সারাদেশ থেকে বিশ হাজার মানুষকে আড়াউহাজার টাকা বিনিময়ে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর এজেন্টে বাড়াতে দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষন।


প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, অতিথি ডটকম এমএলএম এর ভিত্তিতেই ব্যবসা পরিচালনা করে। এজেন্টরাই এটার প্রকৃত উদাহরন। কারন একজন এজেন্ট আরেকজনকে নিয়োগ করাতে পারলে পাচশ টাকা করে পেয়ে থাকেন। আর এর আগ্রহেই আরো এজেন্ট আসবে বলে ধারনা করে তারা।


খোঁজ নিয়ে জানাযায় অতিথি ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম সোহেল নিষিদ্ধ ডেসটিনির সাবেক একজন এজেন্ট হিসেবে আগে কাজ করতেন। সোহেল ডেসটিনির পিএইচডি ছিলেন। ডেসটিনির ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবার কারনে সুযোগটা নতুন করে নিতে চাইছে এই প্রতিষ্ঠান। বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে এমএলএম ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকলেও মো: জামাল নামের এক প্রতারকের পরিকল্পনায় এই ব্যবসা নতুন করে শুরু করে তারা। সেটিও আবার পুলিশ প্লাজায়।


পুলিশ প্লাজার দায়িত্বরগ পুলিশ কর্মকর্তা ডেভেলপমেন্ট রেভিনিউ এর অতিরিক্ত ডিআইজি ড. শোয়েব রিয়াজ আলম গনমাধ্যমকে জানান এমএলএম ব্যবসা করবে জানলে এই প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিতোনা পুলিশ প্লাজা কতৃপক্ষ। পুলিশ প্লাজায় বৈআইনী ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।


সূত্র মতে, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানির প্রতারণায় ফতুর হয়েছেন দেশের লাখ লাখ আমানতকারী। দিগুন মুনাফার লোভ দেখিয়ে কোম্পানিগুলো মুনাফা সংগ্রহ করে হয় পালিয়েছে নইতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। আবার কেউ কেউ এ টাকা বিদেশে পাচারও করেছে। ২০১২ সালের ডেসটিনি কেলেঙ্কারীর পরও থেমে নেই এই কারবার। এমএলএম’র সঙ্গে নতুন করে ই-কমার্সের নামেও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষ।

প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন এমএলএম, অনলাইন ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নানা প্রলোভন দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এরই মধ্যে। গ্রাহকরা তাদের বিনিয়োগের এই পুঁজি ফেরত পাবেন কিনা তা অনিশ্চিত। এমন প্রেক্ষাপটে প্রতারিত লাখ লাখ মানুষ পথে বসে গেছে।

অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের টাকা লুটের সবচেয়ে বড় দুটি উদাহরণ ডেসটিনি ও যুবক। এ দুটি প্রতিষ্ঠান সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে বিচার চলছে ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকসহ ২২ জনের।

অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি বা যুবক। ১৯৯৬ সালে যুবকের নিবন্ধন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (রেজসকো)।

নতুনসময়/এএম


এমএলএম, প্রতারক, মুনাফা, অতিথি ডটকম, কোম্পানি, পুলিশ প্লাজা