ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩২


ভোট নেই তবুও জোটে


২৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:০০

ভোটের আগে চলছে বিভিন্ন জোট ভাঙা-গড়ার পাল্লা, সারা বছর রাজনীতির মাঠে যাদের তেমন কোনো প্রভাব থাকে না তাদেরও বাড়ে কদর।
পরিসংখ্যান বলছে, সংসদ নির্বাচন এলে প্রধান দলগুলোকে ঘিরে জোট বাঁধার প্রক্রিয়া শুরু হয় ।

এতে দল ভারী হলেও ভোট ব্যাংকে বড় কোনো প্রভাব পড়ে না। সেই সাথে দর কষাকষির চলে আসন ভাগাভাগি নিয়ে। অবশ্য প্রতিবারই ভোট শেষে দেখা যায়, হাতে গোণা কয়েকটি দলের বাইরে অন্যদের আসন শূন্য; ভোটের অংকও নগণ্য।

৫টি সংসদ নির্বাচনের রাজনৈতিক দলের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একটি নির্বাচনে সব মিলিয়ে লাখের বেশি ভোট পেয়েছে এরকম দল আছে ১৬টি

১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৫টি দল অংশ নিয়েছিল। সেখানে একটি দল একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট পেয়েছিল ২৫টি।

দেড় যুগ পর ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হওয়ার পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ৩৮টি দল। তাতে একটি দল এক আসনে অংশ নিয়ে ভোট পায় ২৯৭টি।

গত আড়াই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম দলের অংশগ্রহণ ছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বানে। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ১২টি দলের মধ্যে পাঁচটি দলেরই মোট ভোট দশ হাজারের নিচে।

কখনও কখনও দেখা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটের অংকে অনেক দলীয় প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে থাকেন।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরুর পর এখন অনিবন্ধিত কোনো দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। তবে নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোট বেঁধে তাদের মার্কা নিয়ে অনিবন্ধিত দলের প্রার্থীও ভোট করতে পারে। সেক্ষেত্রে অনিবন্ধিত দলের ওই প্রার্থী কাগজে কলমে মনোনয়নদাতা নিবন্ধিত দলের প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে জোটের পরিসর বাড়িয়ে ভোটের মাঠ চাঙ্গা রাখতেই বড় দলগুলো ছোট দলগুলোকে কাছে টানে। নিবন্ধন থাক বা না থাক, কর্মী-সমর্থক যত কমই হোক, জোটের রাজনীতির মূল কথা হল দল ভারী দেখিয়ে ভোটারদের নজর কাড়া।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন:

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটসঙ্গীরা মিলিয়ে মোট ১২টি দল ওই নির্বাচনে অংশ নেয়।

অধিকাংশ দলের ভোট বর্জনের ফলে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জোটের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। আরেক জোটশরিক জাতীয় পার্টি অনেক নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে আলাদা ভোট করে।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় মোট ভোটের ৭৯.১৪ শতাংশ ভোট। আর তাদের তিন শরিকের ভোটের হার ছিল যথাক্রমে ওয়ার্কার্স পার্টি ২.০৬ শতাংশ, জাসদ ১.৭৫ শতাংশ এবং তরিকত ফেডারেশন ০.৩ শতাংশ। বিএনপির বর্জনে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত জাতীয় পার্টি ওই নির্বাচনে পায় ১১.৩১ শতাংশ ভোট।

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান জানান, নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত দলের জোট হলে তাতে ইসির করার কিছু নেই। তবে নিবন্ধিত দলগুলো জোটভুক্ত হয়ে কোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে হলে কমিশনকে জানাতে হবে।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, প্রার্থীদের সংরক্ষিত প্রতীকের বরাদ্দ দেবেন রিটার্নিং অফিসার। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে তফসিল ঘোষণার পরই জোট গঠন ও প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হবে।

তফসিল ঘোষণার পর তিন দিনের মধ্যে জোটভুক্ত দলের প্রতীক নিয়ে কমিশনের কাছে আবেদন জমা দিতে হবে। দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত দলের যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীকে একটি প্রতীক দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে যে দলের প্রতীক ব্যবহার করতে চায় সে দলের প্রধানের অনুমতিসহ আবেদন কমিশনে দিতে হবে।