ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩২


পরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট


২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৮

আট দফা দাবিতে রোববার (২৭ অক্টোবর) থেকে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।

ওসমান আলী বলেছেন, ‘রবিবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন শ্রমিকরা কোনো গাড়ি চালাবে না। নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান আমাদের সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি। তিনি আইনের কঠিন ধারাগুলো ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। এখন আমাদের দাবি না মানা হলে আমরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকবো।’

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আট দফা দাবিতে সমাবেশ করে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনের সহ-সভাপতি ছাদিকুর রহমান হিরুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু, ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আলী সোবা প্রমুখ।

পরিবহন শ্রমিকদের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে: ১. সড়ক দুর্ঘটনায় সব ধরনের মামলা জামিনযোগ্য করা; ২. শ্রমিকদের অর্থদণ্ড পাঁচ লাখ টাকা করা যাবে না; ৩. সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে; ৪. ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করা; ৫. ওয়াস্কেলে (ওজন স্কেল) জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করা; ৬. সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ; ৭. গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকের নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকা; ৮. সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপকহারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা এবং লাইসেন্স ইস্যুও ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা।

আট দফা দাবির বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইনের ধারা বাতিলসহ আমাদের আট দফা দাবি বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। সড়ক পরিবহন ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। কিন্তু আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে গাড়ি চালাতে চাচ্ছে না। এ জন্য আমরা আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায় ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছি।’ এরপরেও দাবি মানা না হলে সারাদেশের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮' জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে যুগোপযোগী আধুনিক ও উন্নত সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের দাবি করে আসছে। সেই দাবিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সরকার আইন পাস করলেও বেশ কিছু ধারা শ্রমিকস্বার্থের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। যে কারণে পরিবহন শ্রমিকদের চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। আমরা জানি দুর্ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটে না কিন্তু অপরাধ পরিকল্পিতভাবেই ঘটে। দুর্ঘটনা মামলায় তদন্ত করে অপরাধী হিসেবে বিচারে ৩০২ ধারায় শ্রমিকদের ফাঁসি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমনিতেই প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি চালান। তার ওপর আবার বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুর ঝুঁকি।

এ কারণে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন। সড়ক পরিবহন জনগুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত। সড়ক পরিবহন এর প্রধান চালিকাশক্তি শ্রমিক। এই শ্রমিকদের সমাজ ও জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আইনের এই ধারাগুলো বিশেষ মহলকে খুশি করতে পারলেও জাতীয় জীবনে চরম বিপর্যয়ের সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। যা আমাদের কাম্য নয়। এ অবস্থায় এই আইনের সংশোধন করা ও বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আমরা আট দফা দাবি তুলেছি।

গত ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘট শুরু হয়। ওই সময় ৯ অক্টোবর, বিকাল ৪টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছিলেন ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা।

এমএ