বিচারকের প্রতি অনাস্থা নিয়ে আদেশ মঙ্গলবার

ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দুই আসামি ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের আদালতের প্রতি অনাস্থার বিষয়ে মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আদেশ দেওয়া হবে। এদিন একই সঙ্গে মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিও অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আদালত আসামির অনাস্থা বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর একান্ত সচিব ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে আলাদা আলাদাভাবে যুক্তি তর্ক মুলতবি রাখার আবেদন করেন আসামীপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার। খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে আদালতে না আসা পর্যন্ত যুক্তিতর্ক মুলতবি রাখার আবেদন করেন তারা।
পরে আসামি মুন্নার পক্ষে তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও মনিরুলের পক্ষে আইনজীবী আক্তার হোসেন আসামিদের কোরাম হয়নি বলে আদালতে জানান। এমতাবস্থায় যুক্তিতর্ক শুনানি আইন সম্মত হবে না। এছাড়াও গত ২০ সেপ্টেম্বরের আদেশে তারা সংক্ষুব্ধ। ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য তারা যুক্তিতর্ক মুলতবি রাখার আবেদন করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল আসামিদের এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এ বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আদালতের বাইরে ষড়যন্ত্র করছে আসামীপক্ষ। বেগম জিয়ার আইনজীবীরা বাহিরের নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে কাজ করছেন।এটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেও উল্ল্যেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আসামীপক্ষ মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে ঘোলপানিতে মাছ শিকার করতে চান। এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি করার কোনো বিধান নেই। তবু যুক্তিতর্ক শুনতে চেয়েছেন আদালত। কিন্তু আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি না করলে মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। যুক্তিতর্ক শুনানি না করলে তিনি রায় প্রদানের জন্য তারিখ প্রার্থনা করেন।
রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান যুক্তিতর্ক স্থগিতের আবেদন নাকচ করলে প্রথমে ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও পরে মনিরুলের পক্ষে তার আইনজীবী আক্তার হোসেন আদালতের প্রতি অনাস্থা জানান।
আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ওই আদালতে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা যায় না বলে এ সময় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর কাজল মুন্নার জামিন বাতিলের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারক মুন্নার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে মনিরুল ইসলাম স্থায়ী জামিনে থাকায় জামিন বহাল রাখা হয়। একই সঙ্গে খালেদার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনও মঞ্জুর করা হয়।
আদালত পক্ষপাতিত্ব করছেন বলে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। এ আদালতে ন্যায়বিচার পাবে না মর্মে যে আশঙ্কা ছিল মুন্নার জামিন বাতিলের মধ্যদিয়ে তা প্রমাণিত হল।
এ মামলার আসামি চারজন হলেন- কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার সরকারের সময়ের রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এর মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক। সোমবার বেলা ১১টা ৮ মিনিটে বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতেই আদালতে কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত আদালত চলে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সেদিন কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে পারেনি। তার পরিবর্তে আদালতে খালেদার কাস্টডি পাঠানো হয়।
খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে ‘অনিচ্ছুক’ বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর আবারও খালেদার ‘অনিচ্ছা’র কথা জানিয়ে কাস্টডি পাঠানো হয় আদালতে।
সেদিন দুদকের আইনজীবী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে কি-না, সে বিষয়ে আদেশের জন্য ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।
ওইদিন আদালত বলেন, খালেদা জিয়া বিচার পর্যায়ে ৪০ বার, আত্মপক্ষ সমর্থন পর্যায়ে ৩২ বার (আদালতে উপস্থিত হতে) সময় নিয়েছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর এতদিন পর্যন্ত এ মামলার যুক্তিতর্ক করা শুরু করা সম্ভব হয়নি।
কোনো আসামি যদি দিনের পরদিন (আদালতে) না আসেন, তবে তো মামলার বিচার প্রক্রিয়া থেমে থাকতে পারে না বলে খালেদা জিয়াকে ছাড়াই অন্য আসামিদের পক্ষে এ মামলার যুক্তিতর্ক শুরুর জন্য আদালত আইনজীবীদের নির্দেশ দেন। পরে ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।
আইএমটি