ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২


ডেঙ্গু আতঙ্কে রাজধানীবাসী


১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২২

এডিস মশা
চলতি বছর রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার কথা স্বীকার করেছেন খোদ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। তবে এ নিয়ে ঢাকার দুই কর্পোরেশনের কার্যকর তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। 
 
ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি গঠন, নিয়মিত ঔষধ ছিটানো ও জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালানোর কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধন কিংবা নিয়ন্ত্রণে কার্যত কর্পোরেশন যেন অসহায়।
 
পুরান ঢাকার বাসিন্দা আয়েশা হাবিব। গত সপ্তাহে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, জ্বর হবে না তো কি হবে। মশা সারাদিন ভনভন করে। কর্পোরেশনের লোক সপ্তাহে একবার আসলে আসে, নয়তো আসে না। আর মশা কি একদিনই জন্মায়। 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: শেখ সালাহ উদ্দিন নতুনসময়কে বলেন, এ বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আমরা ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি গঠন করেছি। লার্ভিং সাইডিং ও এডাণ্টিসাইডিং ওষুধ নিয়মিত ছিটানো হচ্ছে।
 
মশা জন্মানোর স্থান ধ্বংস কিংবা পরিস্কার করা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, অনেক স্থানে আমরা যেতে পারি না। কিন্তু যেখানে সম্ভব সেখানে আমরা যাচ্ছি এবং নিয়মিত পরিস্কার করছি।
 
এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংস করতে গত ২৫ জুন ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে একযোগে কর্মসূচি শুরু করে। দুই দফায় ওই কর্মসূচির আওতায় ৩৩ হাজার ৫০৮টি বাড়িতে গিয়ে এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংস করার পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এছাড়া এডিস মশা ধ্বংস করতে তৃতীয় ধাপে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ‘বিশেষ ক্র্যাশ কর্মসূচি’ চালু করেছে ডিএসসিসি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশরেন চলতি ২০১৮-২০১৯  অর্থবছর  মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। 
 
এরমধ্যে মশকনিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি  ৭০ লাখ টাকা। ফগার, হুইল,স্প্রেমেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। 
 
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাকির হাসান বলেন, ডেঙ্গু রাজধানীতে ভয়াবহরূপ ধারণ করেছে এটা সত্য। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। তবে এডিস মশা প্রতিরোধে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। 
 
ডিএনসিসি গত ৪ আগস্ট মশা নিয়ন্ত্রণের ‘বিশেষ কর্মসূচি’ হাতে নেয়। সেই কর্মসূচি চলে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত। ডেঙ্গু রোগের প্রকোপতা দেখে গত ৯ সেপ্টেম্বর আবার সেটি চালু করেছে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ। সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান বেশি চালাচ্ছেন তারা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটের রাজস্ব ব্যয়সহ অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয় অংশের হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অন্যান্য খাতের পাশাপাশি মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে (মনিটরিং-সার্ভাইলেন্স) ব্যয় হবে ২১ কোটি টাকা।
 
এরমধ্যে মশকনিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। ফগার, হুইল ও স্প্রেমেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে, এটা সরকারি হিসেব। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেয়া রোগীর হিসেব করলে এই সংখ্যা অনেক বাড়বে। 
 
আরেকটি সূত্রের তথ্যমতে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মাস শেষ হলে, সেই হিসেব পাওয়া যাবে।
 
রাজধানীবাসী বলছেন, যে ওষুধ ছিটায়, তাতে কী মশা মরবে? 
 
সিটি কর্পোরেশনের কর্মকাণ্ড দেখে নগরের অনেক বাসিন্দাই বলছেন, মশার কাছে অসহায় কর্পোরেশন।
 
একেএ