ঢাকা বুধবার, ১৭ই এপ্রিল ২০২৪, ৪ঠা বৈশাখ ১৪৩১


মহাকাশ প্রকৌশল নিয়ে পড়তে গিয়ে ফিরলেন সন্ত্রাসী হয়ে


২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০৩

শ্রীলংকায় ভয়াবহ বোমা হামলায় জড়িত আবদুল লতিফ জামিল মোহাম্মদ পড়াশুনার জন্য ব্রিটেনে যাওয়ার আগে স্বাভাবিক ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার বোন শামসুল হাদিয়া। পরবর্তীতে দেশে ফেরার পরেই তার মধ্যে অস্বাভাকিতা দেখা যায়।

ব্রিটেনের টেলিগ্রাফ পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, শামসুল হাদিয়া বলেন- দেশের বাইরে থাকাকালীন তার ভাই উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়েছেন। যদিও লন্ডনের চেয়েও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নেই তিনি এই দীক্ষা বেশি পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি মেলবোর্নের সুইনবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। শামসুল হাদিয়া আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় স্নাতকোত্তর শেষে ফিরে আসার পর দেখা গেছে, তিনি একজন বদলে যাওয়া মানুষ।

হাদিয়া বলেন, তার ভাই একজন ভিন্ন মানুষে পরিণত হয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এবং উগ্রপন্থায় মারাত্মকভাবে জড়িয়ে পড়েন।

অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে আসার পর আমার ভাই অনেক বেশি ধার্মিক হয়ে ওঠেন, বললেন হাদিয়া।

তিনি বলেন, ব্রিটেনে যাওয়ার সময় তিনি খুবই স্বাভাবিক একজন মানুষ ছিলেন। শ্রীলংকায় ভিন্ন একজন মানুষ হিসেবে তিনি ফিরে আসেন।

দেশে আসার পর তিনি পুরোপুরি গুরুগম্ভীর মানুষে পরিণত হন। কারও সঙ্গে ভুলেও মশকরা করেন না। তিনি ছিলেন সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। পরিচিত লোকদের সঙ্গে হাসিঠাট্টাও করতেন না তিনি।

শ্রীলংকায় তিনি বহু বছর ধরে পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন বলেও জানা গেছে।

তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ৩৬ বছর বয়সী আবদুল লতিফ জামিল মোহাম্মদ ব্রিটেনে দুই বছর মহাকাশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ে পড়াশোনা করেছেন। শ্রীলংকায় সন্ত্রাসী হিসেবে তিনি পর্যবেক্ষণে ছিলেন।

এতে চার্চ ও গির্জায় রোববারের হামলা বন্ধে ব্যর্থতার প্রশ্নে শ্রীলংকা চরম বিব্রত অবস্থায় পড়েছে। জামিল মোহাম্মদের ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বলেন, তাকে বহু বছর ধরে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল।

হামলার সময় কলম্বোর তাজ হোটেলে সেদিন পিঠে একটি ব্যাগে বিস্ফোরক ও স্যুটকেস নিয়ে জামিল মোহাম্মদ ঢুকেছেন বলে দেখা গেছে।

সাংগ্রি লা হোটেলে হামলার আগে সিসিটিভির ফুটেজে অন্য দুই বোমা হামলাকারীর মতো তিনি বেসবল ক্যাপ পরেছিলেন।

ব্রিটেনেও তিনি উগ্রপন্থা ছড়িয়েছেন কিনা, তা তদন্ত করে দেখছেন দেশটির কর্মকর্তারা। ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি যুক্তরাজ্যে যান।

২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আগে দক্ষিণ লন্ডনে ভাড়া থাকতেন। পরের বছর ফের দেশটিতে ফিরে যান তিনি।

টেলিগ্রাফকে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে তার ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। কিন্তু তার ধনাঢ্য বাবা তার ছেলেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় না দেয়া হলে হাইকমিশনের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন।

কলম্বোর এশিয়ান অ্যাভিয়েশন সেন্টারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাকাশ প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন তিনি।

২০১৫ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন অভিযোগ করে বলেছিলেন, ব্রিটেনের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় উগ্রপন্থী বক্তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তার মধ্যে কিংস্টন একটি।

২০০৬ সালের দিকে বছরখানেক কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়েছেন তিনি। এরপর অন্য সাত জঙ্গিকে নিয়ে তিনি যখন সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র করছিলেন, তখন তিনি পুলিশের নজরদারিতেই ছিলেন।

কলম্বোর চিড়িয়াখানা এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করেন তিনি। তার মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল তাজ সমুদ্র হোটেল। একযোগে হামলা চালানো অন্য তিনটি হোটেলের পাশেই এটির অবস্থান।

কিন্তু তার বিস্ফোরণ ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে পরের হামলাটি চালানোর আগে তিনি নিরাপদ জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছিলেন।

ইতিমধ্যে জামিল আহমেদের বেশ কয়েকজন বন্ধু ও স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে তার এক বড় ভাই ও শ্যালকও রয়েছেন।

নতুনসময়/এনএইচ