ঢাকা সোমবার, ১২ই মে ২০২৫, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩২

নতুন ওসি পোষ্টিংয়ের পর প্রাণ ফিরেছে থানায়


৩০ আগস্ট ২০২৪ ১২:০৯

শাহজাহানপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ খায়রুল ইসলাম

# ঢাকার ৫০ থনায় নতুন ওসি

# আতঙ্ক কাটিয়ে নতুন মনোবলে পুলিশ আবারও কাজ শুরু করেছে। নাগরিক সেবা নিশ্চিতে দৃড় মনোবল নিয়ে কাজ করছি-খায়রুল ইসলাম, ওসি শাহাজাহানপুর


প্রাণ ফিরেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের থানাগুলোতে। বিশেষ করে থানাগুলোতে ওসিদের পোষ্টিংয়ের পর থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে যেন প্রাণ ফিরে পায়। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থানাগুলো প্রায় পুলিশ শুন্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে সেই অবস্থা কাটিয়ে একটি স্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে চলে আসছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত-উপ কমিশনার ওবায়দুর রহমান বলেন, থানাগুলোর পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। খোদ ডিএমপি কমিশনার বিভিন্ন থানা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি সরেজমিন দেখছেন।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের আইনী সেবার প্রধান কেন্দ্রস্থলই হচ্ছে থানা। গত কিছুদিনের যে পরিবেশ ছিল তা থেকে এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। দিন দিন স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

এদিকে সরেজমিন রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় গিয়ে দেখা যায় পুলিশের উপস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক। থানার গেট দ্বায়িত্বে রয়েছেন দুইজন পুলিশ সদস্য। পরিচয় দিয়ে ভেতরে প্রবেশের মুখেই রয়েছেন আরো দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদেরকেও পরিচয় দিয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা থানার পরিবেশ স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন। বর্তমানে কোন ধরনের ভীতিও নেই বলে জানান তারা।
থানার দ্বিতীয় তলায়তে অফিসার্স ইনচার্জের অফিস কক্ষ। নতুন ওসি হিসেবে যোগদান করেছেন খায়রুল ইসলাম। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি বলেন, গত তিনদিন হলো তিনি এই থানায় যোগদান করেছেন। যোগদানের পরের দিনই পুলিশ কমিশনার এসেছিলেন থানা পরিদর্শন করতে হয়। সবকিছু দেখে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

খায়রুল ইসলাম বলেন, বিগত ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ সরকার পতনের পর পুলিশের মধ্যে যে ধরনের ভীতি ও আতঙ্ক ছিল সেটি কেটে গেছে। আমরা আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে গেছি।
তিনি বলেন, থানায় জিডি বা মামলা করতে লোকজন আসছেন। আমরাও তাদের সেবা দিচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আমাদের বাইরের ডিউটিও শুরু করেছি। অফিসারদের নিয়ে নিজে সঙ্গে থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে নজরদারী করা করছি। এছাড়াও অফিসাররাও পুলিশের যে বিভিন্ন ধরনের ডিউটিথাকে সেগুলো পালন করছেন।

থানায় পুলিশের উপস্থিতিও ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিন যতই যাচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

কথা হয় চকবাজার থানার ওসি রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন কোন ধরনের সমস্যা নেই। আউট ডিউটি, জিডি ও মামলা হচ্ছে। বাইরের ডিউটিরও ঘাটতি নেই।

তিনি বলেন, বুধবার রাতে আমরা অভিযান পরিচালনা করে আসামিও গ্রেফতার করেছি। বর্তমানে এ থানায় আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে।
গুলশান থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গুলশান একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। আমাদের থানার কার্যক্রম সঠিক রয়েছে।

বিগত আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আক্রান্ত হওয়া অন্যান্য থানাগুলোর মধ্যে খিলগাঁও ছিল অন্যতম। থানার ওসি আবু দাউদ খান বলেন, যোগদানের পর থেকে তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। নিজেই থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছেন লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন।

তিনি বলেন, থানায় পুলিশের উপস্থিতি ভালো। জনগণকে পুলিশি সেবা দিয়ে আস্থার জায়গায় নিতে যতধরনের চেষ্টা রয়েছে তা করে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, ভাটারা, উত্তরা, মিরপুর, পল্লবী, তেজগাঁওসহ অন্যান্য থানাতেও প্রায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে।

প্রসঙ্গত, কোটা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ছাত্র জনতার সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্র জনতা থানা আক্রমন করে পাশাপাশি পুলিশের বিপুল সংখ্যক যানবাহন জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার সময় ছাত্র জনতার ওপর পুলিশ গুলি করে। এতে করে একদিকে যেমন ছাত্র জনতা হতাহতের শিকার হয় তেমনি পুলিশও হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে থানাগুলোও পুলিশ শুন্য হয়ে পড়ে। পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি থেকে শুরু করে থানার ওসি, এসআই এমনকি কনেস্টবল পর্যন্ত আত্নগোঁপনে চলে যান। বর্তমানে এখন পর্যন্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিখোঁজ রয়েছেন। অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশের অবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেন। এমন অবস্থায় পুরো পুলিশে ব্যাপক রদবদলের ঘটনা ঘটে। এরই ধারবাহিকতায় ডিএমপির নতুন কমিশনারসহ উর্ধতন কর্মকর্তারাও আসেন। পরে ডিএমপির ৫০টি থানায় নতুন ওসি নিয়োগ দেয়া হয়। নতুন ওসি যোগদানের পর থেকে বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে থাকে। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি প্রায়স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে।