ঢাকা সোমবার, ১২ই মে ২০২৫, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩২

ব্যারিষ্টার তানজিব ও রাশেদ মেহের যুগের অবসান বিমানে


২৭ আগস্ট ২০২৪ ২১:১১

ব্যারিষ্টার তানজিব বামে রাশেদ চৌধুরী (ডানে)

বিমানের পরিচালনা পর্ষদে ব্যারিষ্টার তানজিব যুগের অবসান ঘটলো। দীর্ঘ ৮ বছরে তিনবার চেয়ারম্যান পরিবর্তন ঘটলেও ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের বলয়ে থাকা ব্যারিষ্ঠার তানজিবের কিছুই হয়নি। মঙ্গলবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালনা পর্ষদ পুন:গঠন করা হয়েছে। এই পর্ষদ থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিমানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা যে আন্দোলন করেছিল সেখানে ব্যারিষ্টার তানজিবকে পরিচালনা পর্ষদ থেকে বাদ দেয়ার দাবি করেছিল। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে তানজিবও পলাতক রয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ব্যারিষ্টার তানজিব ও বিমান লিগ্যালের ডিজিএম রাশেদ মেহের চৌধুরী এই দু’জনের সিন্ডিকেট গত ৮ বছরে মামলা, পদোন্নতি, নিয়োগ বাণিজ্য করে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। সম্প্রতি রাশেদ চৌধুরীকেও বিমানের লিগ্যাল থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়েছে। 

জানা যায়, আজ মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৩ সদস্যের ওই পর্ষদ গঠন করা হয়।

পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আগেই নিয়োগ পেয়েছিলেন বিমানের সাবেক এমডি আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। প্রজ্ঞাপনে পর্ষদের পরিচালক হিসেবে ৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি ৮টি পদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেসব পদে যখনই যেই ব্যক্তি দায়িত্বে থাকবেন তাঁরা বিমানের পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন।

পর্ষদে যেই ৪ জনের নাম উল্লেখ করে পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন—বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিমানের সাবেক পরিচালক লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) ইঞ্জিনিয়ার শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, আইএসিএবির কাউন্সিলর ও ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডের এমডি ও সিইও নূর-ই-খোদা আব্দুল মবিন, র‍্যাংগস ওয়াটারফ্রন্ডের আলী আশফাক।

পর্ষদের বাকি ৮টি পদে যারা থাকবেন, তাঁরা হলেন—বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ, অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং বিমানের এমডি ও সিইও (যখন যিনি দায়িত্বে থাকবেন)।

বিমানের আগের পর্ষদগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিমানবাহিনী, বিজিএমইএ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের পদ থাকলেও এসব সংস্থা বা ক্ষেত্র থেকে কাউকে রাখা হয়নি।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, গত ৮ বছর ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপসের বলয়ে থাকা ব্যারিষ্টার তানজিম ছিলেন বেপরোয়া। তার সঙ্গী ছিলেন রাশেদ মেহের চৌধুরী।

গত ৮ বছরে বিমানের প্রায় ১ হাজার মামলা হয়েছে। বিমানের অভ্যন্তরীন এই মামলাগুলো পরিচালনা করার জন্য ব্যারিষ্টার তানজিম ও রাশেদ মেহের কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছেন। তারা একদিকে যেমন বিমান থেকে টাকা নিয়েছেন অপরদিকে মামলার বাদির নিকট থেকেও টাকা নিয়েছেন। এ কারণে পুরো বিমানের তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম নিয়েছিল।

এছাড়াও নিয়োগ পদোন্নতিতেও তাদের কালো হাত ছিল। ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপসের ইশারায় কে কখন নিয়োগ পাবে বা কার পদোন্নতি হবে সবকিছুই নিয়ন্ত্রন করতো তারা। গত ৮ বছরে অন্তত শতকোটি টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ বিমানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের।

তাদের অভিযোগ, বিমানের চেয়ারম্যান থেকে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদের রদবদল হলেও তারা ছিলেন অসীম ক্ষমতাধর। তাদের গায়ে কোন আঁচড় পড়েনি। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তাদের অনুসারীদের বহিস্কার, কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ, করোনাকালীন কর্তনকৃত টাকা ফেরতসহ বেশকিছু দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনে দাবির মুখে রাশেদ মেহের চৌধুরীকে বদলি করে দেয়া হয়। ভেঙ্গে দেয়া পরিচালনা পর্ষদ পূন:গঠন করা হয়ে আর সেখান থেকে বাদ ব্যারিষ্টার তানজিমকে।