ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ জেলা রেজিষ্ট্রারের সহকারীর ৫ ফ্ল্যাট


২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৭

ছবি-নতুনসময়

ময়মনসিংহ জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান সহকারী কাজল কুমার চন্দের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাকরীর ১৫বছর একই কর্মস্থলে থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি মাধ্যমে ময়মনসিংহ নগরীতে ৫টি ফ্ল্যাট বাসা ও একটি দোকানের মালিক হয়েছেন। তবে নিজের দুর্নীতি ঢাকতে ২টি ফ্ল্যাট ও দোকান তার ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন।

নগরীর দূর্গাবাড়ি রোডের রাইট পয়েন্টের মালিক হোসেন ফকির জানান, জেলা রেজিস্ট্রারের প্রধান সহকারী কাজল কুমার চন্দ আমার কাছ থেকে চারটি ফ্লাট ও একটি দোকান ক্রয় করেছে। ৯’শ৩০ স্কয়ার ফিটের ৪টি ফ্লাট ও একটি দোকান প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যে তার কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ নকল-নবিশ এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সোহেল আকন্দ বলেন, রেজিস্ট্রারের প্রধান সহকারী ক্ষমতার বলয়ে একই কর্মস্থলে ১৫ বছরে ধরে রয়েছে। কায়েম করছে নিজ রাজত্ব। তার নামে বেনামে শহরে রয়েছে একাধিক ফ্লাট। নগরীর রাইট পয়েন্ট টাওয়ারে ৫তলায় দুটি ও ১১তলায় আরো দুটি নিচ তলায় রয়েছে ১টি দোকান। আঠারবাড়ীতে রয়েছে আরো একটি নির্মানাধীন ফ্লাট। নিজের নামে দু’টি ফ্লাটের রেজিস্ট্রি করলেও বাকি তিনটি ফ্লাটের রেজিস্ট্রি করিয়েছেন তার ভাই বিপ্লবের নামে।

একজন নকল-নবিশ অস্থায়ী ভাবে যোগদানের ১০-১৫ বছর পর তাদের চাকরী স্থায়ী করন করতে ৫-১০ লক্ষ টাকা কাজলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি অফিসকে দিতে হয়। সেখান থেকেও কাজল মোটা অংকের টাকা পান। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে মাসুয়ারা, বদলীর তদবীর ও বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্য করে বনে গেছেন কোটিপতি। করছেন বিলাসী জীবন-যাপনও। বছরে দুইবার পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতেও ভ্রমণ করতে যান কাজল।

ময়মনসিংহ নকল-নবিশ এসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, দৈনিক আমাদের অফিসে ৬০-৭০ জন নকল তোলার আবেদন করেন। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ৩শ থেকে ৪শ টাকার মধ্যে নকল দেয়ার কথা থাকলেও সেখান নেয়া হয় ১হাজার থেকে ১২শ টাকা। অতিরিক্ত টাকা প্রতিদিন রেকর্ড কিপারের মাধ্যমে কাজল বাবুর পকেটে যায়।
এছাড়াও কাজল বাবুকে ম্যানেজ করে জেলার ফুলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ষাটোর্ধ্ব ১০-১৫জন নকল-নবিশ নিয়ম বর্হিভূত ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

নকল তুলতে চর-ঈশ্বরদিয়ার এনামূল হক জানান, একটি জমির নকল তুলতে কাজল বাবুর কাছে পরমার্শের জন্য যাই। পরে কাজল বাবু আমার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু আমি টাকা দিয়েও চারমাস ধরে নকলে জন্য ঘুরছি।

কাজল কুমার চন্দ বলেন, মানুষ ১৫ বছর সরকারী চাকরী করলে শতশত কোটি টাকার মালিক হয়। আমি দু’টি ফ্লাটের মালিক হয়েছি বেশি কিছু করেনি। বাকি ফ্লাট গুলো আমাদের পরিবারের কেনা।

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার জল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হক বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের হিন্দু ধর্মের শিক্ষক বিপ্লব কুমার চন্দ। তাদের অবস্থা মোটামুটি ভালো। তবে তাদের বাড়িতে যে পরিমান সম্পদ আছে তা বিক্রি করেও ময়মনসিংহ শহরে ৫টি ফ্লাট বাসা ও দোকানের মালিক হওয়া সম্ভব নয়। তবে শুনেছি তার ভাই কাজল কুমার চন্দ অনেক টাকা ইনকাম করে।

হিন্দু ধর্মের শিক্ষক বিপ্লব কুমার চন্দ বলেন, আমি হাই স্কুলে এবং আমার স্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরী করি। আমাদের অবস্থা খারাপ নয় ভালোই। শহরে আমাদের ফ্যামীলির ৫টি ফ্লাট বাসা ও দোকান রয়েছে। মূলত সব’কটি ফ্লাটের মালিক কাজল ভাই থাকলেও দু’টি ফ্লাট ও একটি দোকান আমার নামে রেজিস্ট্রি করিয়েছে।

একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ১০হাজার ২শ টাকা স্কেলে চাকরী করে কিভাবে ৫টি ফ্লাট ও দোকানের মালিক হয় সেটি বোধগম্য নয় বলে জানিয়েছেন জেলা জনউদ্যোগ এর আহবায়ক ও ময়মনসিংহ জেলা মানবাধিকার কমিশনের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্ন। দ্রুত এদের চরিত্র জনসম্মুখে উন্মোচন করে অবৈধ অর্থ দিয়ে উপার্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি, তার অনৈতিক কাজে সহযোগীদেরও বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তিনি।

জেলা রিজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবীর বলেন, আমি আসার আগে রেজিস্ট্রি অফিসে কী হয়েছে জানিনা। তবে এখন রেজিস্ট্রি অফিসের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখানে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। তবে কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, জেলার প্রত্যেকটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস আমাদের নজর দাড়িতে রয়েছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।