রাজশাহী-৪ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়নে আ.লীগের চমক

রাজশাহী -৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নাটকীয়তায় মোড় নিয়েছে। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত এ আসনে মনোনয়নে চমক আসছে। বিশেষ করে ঋণখেলাপীদের মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়টি সামনে আসায় এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীতায় চমক আসতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ আসনের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুলক ঋণখেলাপী হওয়ায় তার নির্বাচন করা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে আলোচনায় চলে এসেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান রানা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এক মামলার রায়ে জাতীয় সংসদের চিপ হুইপ আসম ফিরোজের ঋণখেলাপির পুন:তফসিল না করার জন্য সোনালী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন। আসম ফিরোজের পটুয়াখালী জুট মিলস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রয়েছে। ওই মালিকানাধীন জুট মিলস সোনালী ব্যাংকের ঋণ নিয়েছে। এই ঋণ ১৯ বার পুন:তফসিলিকরণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি অনুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি তিনবারের বেশি ঋণ পুন:তফসিলিকরণ করতে পারে না।
হাইকোর্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সিদ্ধান্তকে উদ্ধৃতি করে একজন রিট আবেদনকারী আ স ম ফিরোজকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য আদেশ চেয়ে রিট আবেদন করেন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ যে আদেশ দেন, তাতে বলা হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুসরণ করে পুন:তফসীলিকরণ না করার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। রিট আবেদনকারী আইনজীবীরা বলছে এর ফলে আ স ম ফিরোজ নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।
এদিকে এই রায়ের ফলে শুধু আ স ম ফিরোজই নন। আওয়ামী লীগ থেকে রাজশাহীর সাংসদ এনামূল হক, যিনি এনা প্রপার্টিজের মালিক, যিনিও ঋণখেলাপি এবং পুন:তফসীলিকরণ করে নির্বাচন করার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। এর ফলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঢাকার একটি আসনে আসলামুল হক, তিনিও ঋণখেলাপি। তিনিও পুন:তফসীলিকরণের মাধ্যমে নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। এই রায় তাঁর নির্বাচনকেও হুমকির মুখে ফেলবে।
এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন সাংসদ রয়েছেন, যারা পুন:তফসীলিকরন নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের ফলে যাদের নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপির নেতা জয়নাল আবেদিন ফারুক, শহীদুল হক জামালসহ একাধিক নেতা ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে এই পুন:তফসিলের সুবিধা যদি না পান তাহলে নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই ঋণখেলাপির ইস্যুকে সামনে রেখেই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির উভয় দলই বিকল্প প্রার্থী রাখছেন। এই বিকল্প প্রার্থীদেরও প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
সূত্রমতে রাজশাহী ৪ আসনে মনোনয়ন উত্তোলনকারীদের অন্যতমদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ, সাবেক মন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা।
জানা যায়, এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হকের সঙ্গে সান্টু ও কালামের দূরত্বের বিষয়টি প্রকাশ্য। এমনকি এমনকি এ দুই নেতারা মধ্যে মুখ দেখাদেখিও হয় না। মনোনয়নের ক্ষেত্রে এনামুল হক কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও ঋণখেলাপী হওয়ায় তার নির্বাচন করা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেয়ার আলোচনা শুরু হয়েছে। তাতে করে সাবেক এ ছাত্রনেতার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, যেহেতু আওয়ামী লীগ এবার সারাদেশেই ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দেবে সেক্ষেত্রে এ আসনেও ক্লিন ইমেজের প্রার্থী বলতে রানাকেই বোঝানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঋণখেলাপী দায়ে যদি নির্বাচন করতে না পারেন ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক তবে এ আসনে চমক হিসেবে রানাকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে।
এমএ