ঢাকা শনিবার, ২৮শে জুন ২০২৫, ১৫ই আষাঢ় ১৪৩২


শেষ হলো বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন


১৫ জুন ২০১৯ ২২:৫৩

১২ জুন ঢাকায় শুরু হওয়া বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪৮ তম সীমান্ত সম্মেলন ১৫ জুন (শনিবার) শেষ হয়েছে।

সীমান্ত সম্মেলন নিয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী রজনীকান্ত মিশ্রা, আইপিএস এর নেতৃত্বে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪৮ তম সীমান্ত সম্মেলন, ঢাকায় অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো: সাফিনুল ইসলাম, এনডিসি, পিএসসি এর নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও চমৎকার সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং এই সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একইসাথে বিজিবি’র সীমান্ত পরিবার কল্যাণ সমিতি (সীপকস) প্রতিনিধিদলের সাথে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময়ের লক্ষ্যে আগত বিএসএফ ওয়াইভ্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী শ্রীমতি গীতা মিশ্রা এর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

বিজিবি মহাপরিচালক সম্মেলনের শুরুতে সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান এবং বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের জনগণ সবসময়ই উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্কের প্রশংসা করে এবং প্রত্যাশা করে যে, সীমান্তে নিহতের ঘটনা ও মাদক চোরাচালান শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

বিএসএফ মহাপরিচালক তাঁকে এবং ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য বিজিবি মহাপরিচালকের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিবি ও বিএসএফ এর সমন্তিত যৌথ কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বজায় রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি উভয় দেশের অপরাধীদের দ্বারা গবাদি পশু চোরাচালান, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া কেটে ফেলা এবং বিএসএফ সদস্যদের উপর আক্রমণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উভয় মহাপরিচালক বিদ্যমান সীমান্ত ব্যবস্থাপনার কৌশল এবং উভয় বাহিনীর মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।

সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নিম্নরূপ :

সীমান্তের যে সকল এলাকায় গবাদি পশু ও মাদক চোরাচালান হয়ে থাকে সে সকল স্থানে সমন্বিত যৌথ টহল পরিচালনাসহ যৌথ কার্যক্রম গ্রহণ এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সীমান্তে নিহতের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে।


সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা- সিবিএমপি (Coordinated Border Management Plan-CBMP) এর ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরণের আন্ত:সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে উভয় পক্ষই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সিবিএমপি বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে।

মানব পাচার ও অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হন।

বিএসএফ মহাপরিচালক সন্দেহভাজন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর (Indian Insugent Groups) বিরুদ্ধে বিজিবি ও বাংলাদেশের অন্যান্য বাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান ধ্বংস করতে বিজিবির অব্যাহত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। বিজিবি মহাপরিচালক জানান, বাংলাদেশ কখনও তার ভূমি কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা অন্য কোন রাষ্ট্রের শত্রু পক্ষকে ব্যবহারের সুযোগ দেয় না। তিনি এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন। এ প্রেক্ষিতে বিজিবি মহাপরিচালক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা কখনও কোন গোষ্ঠী/সন্ত্রাসীদেরকে অন্য কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের ভূমি ব্যবহারের সুযোগ দেই না এবং সব ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ‘জিরো টলারেন্স’ প্রদর্শন করে থাকে”।


উভয় পক্ষ সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অনুযায়ী অসতর্কতাবশত: সীমান্ত অতিক্রমকারী সাধারণ নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কাছে দ্রুত সোপর্দ করতে সম্মত হয়েছে।

উভয় পক্ষ সীমান্তে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্য, মাদক, স্বর্ণ এবং জালমুদ্রা পাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছে। চোরাচালান দ্রব্যসহ আটক ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের প্রতিবেদন প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিময়ের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

উভয় পক্ষ সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে সমন্বিত চেক পোস্ট ও স্থল বন্দর নির্মাণ কাজসহ বন্ধ থাকা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজগুলোর ব্যাপারে যথোপযুক্ত পর্যায়ে জয়েন্ট ভেরিভিকেশনের মাধ্যমে যতদ্রুত সম্ভব সমাধানের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।

উভয় মহাপরিচালক মায়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের ভারত হতে বাংলাদেশে চলাচল প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখাসহ পরস্পরকে সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়েছেন।

যৌথ নদী কমিশনের অনুমোদন অনুযায়ী সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণে সহায়তা প্রদান এবং অননুমোদিত ভাবে সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ না করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

উভয় পক্ষ পর্যায়ক্রমে সীমান্তে নতুন ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করে কুমিল্লা এলাকায় ২য় ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

উভয় পক্ষ বিদ্যমান পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছে।

উভয় পক্ষ সীমান্ত এলাকার অপরাধী/চোরাচালানীদের তালিকা পরস্পরকে হস্তান্তর করেছে এবং এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে পরস্পরের সহায়তা চেয়েছে।

উভয় পক্ষ মহাপরিচালক পর্যায়ের পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন আগামী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ হতে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একমত পোষন করেছে।

 

নতুনসময়/এনএইচ