অনিরাপদ ওয়াসার পানি

পুরো রাজধানীজুড়েই অনিরাপদ পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সুপ্রিয় পানির কথা বললেও সেই পানি সুপ্রিয় নয়।
মঙ্গলবার ৭ মে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলন আয়োজিত 'নিরাপদ পানি : ওয়াসার দাবি ও জনগণের অভিজ্ঞতা' শীর্ষক গণশুনানিতে এসব কথা বলেন বক্তারা। নিরাপদ পানি সরবরাহ, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে 'ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলন'।
ভুক্তভোগীরা বলেন, পুরো রাজধানীজুড়েই অনিরাপদ পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা।এসবের প্রতিবাদ করায় ওয়াসা কর্তৃক নানাভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
গণশুনানিতে তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ঢাকার চারপাশে যে নদী রয়েছে সেগুলোর পানি যদি পরিষ্কার থাকতো তবে মানুষের অসুখ-বিসুখ প্রায় ৫০ শতাংশ কম হতো। কারন, পানিবাহীত রোগীর সংখ্যাই বেশি। নিরাপদ পানির পাইপের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের ঘরে যাবে, এটা তাদের নাগরিক অধিকার। কিন্তু সেটা জনগণ ভোগ করতে পারছে না। পানির আলাদাভাবে বাণিজ্যিকীকরণের ব্যবস্থাপক চলছে। আমরা চাই, এটা বন্ধ করে ওয়াসার নিরাপদ সুপেয় পানি ঘরে বসে ট্যাপ খুলে পান করতে।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আজকের এই গণশুনানি জীবন নিয়ে গণশুনানি। কারণ, পানির অপর নাম জীবন। ওয়াসার অনিয়ম-দুর্নীতি এখনো বন্ধ করা যায়নি। যদি এই দুর্নীতি বন্ধ করা যেত তবে বছর বছর পানির দাম বাড়তো না। নাগরিকরা ঘরে বসে বিশুদ্ধ সুপেয় পানি পেত। ওয়াসার পাহারাদার সরকারকে আমরা বলতে চাই, আমরা বোতলের পানি কিনে পান করতে চাই না, আমরা সরাসরি ট্যাপের পানি পান করতে চাই।
জনসাস্থ প্রকৌশলী ড. লেলিন চৌধুরী বলেন, ওয়াসার দায়িত্ব নগরবাসীকে সুপেয় পানি পান করানো। কিন্তু তারা জনগণকে সেই সুবিধা দিচ্ছে না। সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি আসাদগেটে ওয়াসার একটি ল্যাবরেটরী আছে। যেখানে পানির বিশুদ্ধতা নির্ণয় করা হয়। সেখানে তারা আমাদের টাকায় বেতন নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু কাজ করছে না। সরকারের উচিত, তারা হয় নিয়মিত কাজ করবে, না হলে ওয়াসার থেকেই এই ডিপার্টমেন্ট বাতিল করে দেওয়া হোক। প্রয়োজন হলে আমরা নদীর পানি সংগ্রহ করে পান করবো।
জুরাইন বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম সানি বলেন, ছোট থেকে এই এলাকায় বড় হয়েছে। আগে আমরা সরাসরি ট্যাপের পানি পান করতাম। কিন্তু এখন সেই পানি দিয়ে গোসলও করতে মন চায় না। কারণ, অনেক সময় সেই পানির রং হয় হলুদ বা কাল। আর রান্না তো অসম্ভব ব্যাপার। ওয়াসার কাছে আমরা বারবার অভিযোগ করেও এর কোন প্রতিকার পায়নি।
ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলনের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান দাবি করে বলেন, বাসায় বসে ট্যাপ ছেড়ে পানি পান করতে চাই, যেসব বাসাবাড়ি এলাকায় পানি নাই এবং বিষাক্ত নোংরা ময়লা পানি আসছে সে সব বাসাবাড়িতে, এলাকায় অতিদ্রুত নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে, দূষিত পানির কারণে জুরাইন শ্যামপুর মুরাদপুর দুনিয়া এ পর্যন্ত যারা অসুখ-বিসুখ এর শিকার হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, পূর্বে সরবরাহকৃত পানি দূষিত হওয়ার সত্ত্বেও তার জন্য যে বিল পরিশোধ করা হয়েছে, সেই সমুদয় অর্থ গ্রাহককে ফেরত দিতে হবে।
ভবিষ্যতে সুপেয় পানি না পাওয়া পর্যন্ত অত্রঅঞ্চলের মানুষ কোন বিল প্রদান করবে না, বছরের পর বছর কিভাবে নোংরা, দূষিত পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা, সেই বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে এবং অসত্য বক্তব্যের জন্য ওয়াসার এমডিকে ক্ষমা চাইতে হবে। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে পদত্যাগ করতে হবে।
এতে অংশ নিয়ে পানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, পয়ঃবর্জ্য শোধন না করেই পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। ঢাকা এখন ময়লা পানিতে ভাসছে বলেও মন্তব্য করেন তারা। রাজনীতিবিদ রুহুল আলম প্রিন্স বলেন, দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ওয়াসা। নিরাপদ পানি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।
গণশুনানিতে বাম দলের নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম সহ ওয়াসা নিরাপদ পানি আন্দোলনের বিভিন্ন সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নতুনসময়/রাখি/এসআই