ঢাকা সোমবার, ১৮ই আগস্ট ২০২৫, ৪ঠা ভাদ্র ১৪৩২


বাংলাদেশে বিপ্লবের এক বছর পর আশা হতাশায় রূপ নিচ্ছে


১৭ আগস্ট ২০২৫ ০৮:০১

সংগৃহীত

জুলাই বিপ্লবের এক বছর পর ‘বাংলাদেশিদের আশা হতাশায় রূপ নিচ্ছে’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। ১৪ আগস্ট মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি জুলাই বিপ্লব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, অনেক বাংলাদেশি পরিবর্তনের ধীরগতি নিয়ে হতাশ। পাশাপাশি বিপ্লবের এক বছর পর অর্থনীতি ও পরিচিত সমস্যাগুলো নির্মূল না হওয়া নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছর আগে বাংলাদেশের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ছাত্রদের ওপর নির্মম দমন-পীড়ন চালান। তখন আবু সাঈদ রংপুর শহরে সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে সাহসী ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে, দুই হাত প্রসারিত করে প্রতিবাদ জানান। মুহূর্তের মধ্যেই তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে আহত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

 

গণ-অভ্যুত্থানে নিহত প্রায় এক হাজার ৪০০ জনের মধ্যে আবু সাঈদ একজন। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তিনি এমন একটি দেশ ছেড়ে যান, যা অরাজকতার শেষ সীমায় পৌঁছেছিল। তবে আশার আলোও ছিল।

 

ছাত্ররা বাংলাদেশের পুনর্গঠন চেয়েছিলেন। তারা একটি বৈষম্যহীন এবং কম দুর্নীতিগ্রস্ত গণতান্ত্রিক দেশ চেয়েছিলেন। এই আশা নিয়ে তারা নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে নিয়োগে সহায়তা করেন। বাংলাদেশকে অস্থিরতা থেকে স্থিতিশীলতার দিকে নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটি নিয়েছিলেন তিনি।

 

তবে অনেক বাংলাদেশি পরিবর্তনের ধীরগতি নিয়ে হতাশ। তারা ভাবছে, আবু সাঈদের মতো প্রতিবাদকারীরা কি তাদের জীবন বৃথাই ত্যাগ করেছেন!

 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখনো দুর্নীতি, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থানের ঘাটতি এবং গেঁথে বসা আমলাতন্ত্রের মতো প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যাগুলো দূর করতে হিমশিম খাচ্ছে। এদিকে ছাত্ররা চাইছেন, গণতান্ত্রিক সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়িত হোক। তারা চাইছেন, আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় যেসব রাজনৈতিক দলের সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত তাদের দ্রুত শাস্তি কার্যকর হোক।

 

বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের সংস্কারের ভার এখন ড. ইউনূসের কাঁধে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে এখনো বিভাজন রয়েছে এবং এখানে প্রায় ৬০টি রাজনৈতিক দল সক্রিয়। ড. ইউনূসের প্রথম কাজ ছিল আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। যদিও এখন বাংলাদেশ কিছুটা স্থিতিশীল।

 

ইউনূসের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল, একটি ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি শুরু করা। এ লক্ষ্যে সংস্কারের প্রস্তাব দিতে তিনি ১১টি কমিশন তৈরি করেন, যার মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ও পুলিশ সংস্কার অন্তর্ভুক্ত। এর সামগ্রিক লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে যেসব প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এনেছিলেন, সেগুলোর সংস্কার করা। কিন্তু এই সংস্কারের কমই বাস্তবায়িত হয়েছে।

 

বাংলাদেশের নেতৃত্বকে মানবাধিকারকর্মীদের কাছেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তারা বলছেন, নতুন বাংলাদেশে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এছাড়া বাংলাদেশে অর্থনীতি ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এ অবস্থায় বেশির ভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও উদ্বেগ বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালের চেয়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমেছে।