চার্জশিটেই বাদ গুলিবর্ষণকারী প্রবাসীরাও আসামি!

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে দায়ের করা হত্যা মামলার প্রথম চার্জশিটেই বড় ধরনের গলদ লক্ষ করা গেছে। এতে গুলিবর্ষণকারী আসামিকে বাদ দিয়ে প্রবাসী অনেককেই আসামি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট আসামি ছিল ৮ জন। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছিল ৩০-৪০ জনকে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসাবে তদন্তে পেয়েছেন ২৩১ জনের নাম! এই ২৩১ জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিয়েছেন। আগামী ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদীর উপস্থিতিতে অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলায় শহীদুল ইসলাম শহীদ (৩৭) নামে এক দোকান কর্মচারী হত্যা মামলায় চান্দগাঁও থানার এসআই মো. ফয়সাল চার্জশিট দাখিল করেন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় যে ১৪টি হত্যা মামলা করা হয়েছে, তার মধ্যে এটিই ছিল প্রথম চার্জশিট।
চার্জশিটে চট্টগ্রামের সাবেক তিন মন্ত্রী, দুই মেয়র, সাবেক বেশ কয়েকজন এমপি, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার সময় দেশে ছিলেন না-এমন তিন প্রবাসীকেও আসামি করা হয়েছে। আবার পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ার অজুহাতে চার্জশিটে থাকা একজনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। জাফর নামের ওই আসামি ভিকটিমের ওপর গুলিবর্ষণ করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১৬ দিনের মাথায় এই মামলার তৃতীয় আইও ফয়সাল এই মামলার চার্জশিট দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বাদী নাম দিয়েছেন জ্ঞাত-অজ্ঞাত মিলে ৪৮ জনের। আর তদন্তকারী কর্মকর্তা পেয়েছেন ২৩১ জনের নাম। তিনি কী আদৌ এই মামলা তদন্ত করেছেন নাকি কারও বশীভূত হয়ে বা হয়রানির উদ্দেশ্যে এখানে ‘চার্জশিট বাণিজ্য’ করেছেন, সেটিই বড় প্রশ্ন। যেখানে শুরু থেকেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা থেকে সরকারে ঊর্ধ্বতন মহল নিরীহ বা জড়িত নয় এমন লোকজনকে হয়রানি না করতে নির্দেশ দিয়ে আসছে, সেখানে এই মামলার চার্জশিট থেকে প্রতীয়মান হয়ে যে, কেবল হয়রানির উদ্দেশ্যেই গণহারে এখানে মামলার আসামি করা হয়েছে। মামলার আইও এখানে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেননি। এ ধরনের মামলার বিচারে আদালতও হয়রানির শিকার ও বিব্রত হবেন বলে আমার ধারণা। এতে প্রকৃত আসামিরা পার পেয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।