কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ওয়াহিদা বেগম রাকাবের এমডি, অর্থ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ

তিন মাসের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত ওয়াহিদা বেগমকে ফের রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সামনে আসার পর থেকেই ব্যাংকিং মহল ও প্রশাসনিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ওয়াহিদা বেগম অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। চলতি বছরের ৯ মার্চ তিনি রাকাবের এমডি হিসেবে যোগদান করেন। অথচ, এর কিছুদিন আগেই, ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি, রাজধানীর দিলকুশাস্থ মুন টাওয়ার সংক্রান্ত একটি ঋণ মামলায় হাইকোর্ট তাকে এবং অগ্রণী ব্যাংকের আরও চার কর্মকর্তাকে আদেশ অমান্যের দায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
আদালতের রায় উপেক্ষা করে নিয়োগ:
ওয়াহিদা বেগমের এমন একটি স্পষ্ট দণ্ডাদেশ থাকা সত্ত্বেও তাকে কিভাবে আবারও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদে নিয়োগ দেওয়া হলো — এ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ব্যাংকিং ও প্রশাসনিক মহলে অনেকেই এটিকে “নীতির পরিপন্থী”, “বিচার বিভাগের অবমাননা” এবং “ব্যবস্থাগত ব্যর্থতার উদাহরণ” হিসেবে উল্লেখ করছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ, অপসারণের দাবি:
এমন বিতর্কিত নিয়োগের বিরুদ্ধে সাংবাদিক ও ‘জুলাই আন্দোলনের’ কর্মী জাভেদ হোসেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি ওয়াহিদা বেগমকে “ফ্যাসিবাদের দোসর” আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তার অপসারণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “যে কর্মকর্তা হাইকোর্টে দণ্ডপ্রাপ্ত, যার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, বদলি ও প্রমোশন বাণিজ্যের একাধিক অভিযোগ রয়েছে — তাকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে রাখা যায় না। এটি বিচার বিভাগের আদেশ, প্রশাসনের নৈতিকতা এবং ব্যাংকিং খাতের জবাবদিহিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
ঘুষ বাণিজ্য, ঋণ জালিয়াতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ:
অভিযোগ রয়েছে, অগ্রণী ব্যাংকে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ওয়াহিদা বেগম ঘুষের মাধ্যমে পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, ২০২৪ সালের একটি প্রমোশনে তিনি প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করেন।
এছাড়াও, কর্পোরেট গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ অনুমোদন, সিন্ডিকেট পরিচালনা, এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ ও প্রমোশন বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে দুদকে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে বলেও জানা গেছে।
ব্যাংকিং মহলে উদ্বেগ:
ব্যাংকিং বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাকাবের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকে এমন এক ব্যক্তির নিয়োগ আগের দুর্নীতিগ্রস্ত ধারার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা তৈরি করছে। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলও বিষয়টি নিয়ে সরব।
রাজশাহীর এক রাজনৈতিক নেতা বলেন, “একজন দণ্ডপ্রাপ্ত, বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার এভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরে আসা শুধু অর্থনৈতিক নয়, প্রশাসনিকভাবেও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।”