ঢাকা বুধবার, ২রা জুলাই ২০২৫, ১৯শে আষাঢ় ১৪৩২


বিমানবন্দরে সুফল মিলছে সাড়ে ৬শ’ কোটির অত্যাধুনিক রাডারের


৩০ জানুয়ারী ২০২৪ ১০:৫৫

প্রতিকি

অত্যাধুনিক রাডার ও নেভিগেশন ব্যবস্থা পূর্নাঙ্গভাবে শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে দেশে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসেছে এই ব্যবস্থা। যার ফলে প্রায় ৪৩ বছরের পুরনো রাডার ব্যবহারের অবসানও ঘটতে যাচ্ছে। প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে ফ্রান্সের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালাস এই রাডার নির্মান করেছে। ইতিমধ্যে আংশিক ব্যবহারে এর সুফলও পেতে শুরু করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আগামি জুনের মধ্যে দেশের পুরো আকাশসীমা নজরদারি করতে পারবে ।

বেবিচক সূত্র বলছে, অত্যাধুনিক এই ব্যবস্থা চালু হলে বাংলাদেশের পুরো আকাশসীমা নজরদারির আওতায় আসবে। এতে উড়োজাহাজ চলাচল আরও নিরাপদ হবে। পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশ।

বেবিচকের চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় ৫ মাস বাকি থাকতেই আমরা নতুন রাডার বসানো প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আগের রাডারের সঙ্গে সমন্বয় করতে কিছু সেন্সর সংযুক্ত হচ্ছে। এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও কথোপকথনের যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। জুনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হলে আকাশ চলাচল ব্যবস্থার মান উন্নয়ন হবে। আর কোন ঝুঁকিও থাকবেনা।

জানা যায়, বিদ্যমান রাডার ও নেভিগেশন ব্যবস্থাটি প্রায় ৪৩ বছরের পুরোনো। , ১৯৮০ সালের রাডার ব্যবস্থাটি ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের পুরো আকাশসীমা নজরদারির আওতায় আসে না। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের অংশ। এতে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ। কারণ, নিয়ম অনুয়ায়ী, অন্য কোনো দেশের উড়োজাহাজ বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করলে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফি নেওয়ার বিধান আছে। আকাশসীমা একবার ব্যবহারের জন্য ‘ফ্লাইং ওভার চার্জ’ নামের এই ফি-এর পরিমাণ প্রায় ৫০০ ডলার। কিন্তু ওই এলাকায় দিয়ে চলাচলকারী উড়োজাহাজ সনাক্তই করতে পারেনা। যার কারণে লাখ লাখ ডলার আয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে আছে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম দি ডেইলি ম্যাসেঞ্জারকে বলেন, পুরনো রাডার অনেক আগেই কার্যকারিতা হারিয়েছে। এতে যে কোন ধরণের দূর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। তবে নতুন রাডার সংযুক্ত হলে আকাশ চলাচল নির্বিঘ্ন হবে। এতদিন লাখ লাখ ডলারের আয়ের যে সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে সেটি ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, ওই এলাকা দিয়ে বিশে^র পূর্ব ও পশ্চিমের যত সংখ্যক ফ্লাইট চলাচল হয় তার একটি বড় অংশ চলাচল করে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। আর এই ফ্লাইটগুলো বঙ্গপোসাগরের আশপাশের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। বর্তমানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যে রাডার সিস্টেম বসানো হয়েছে তাতে এই সকল এলাকা কাভার করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে দেশের প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হব্যে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান রাডার সিস্টেমটি ঠিকমতো কাজ করে না। যে কারণে এয়ারট্রাফিক সঠিকভাবে ম্যানেজ করা যায় না। মাঝে মাঝে এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে এয়ারট্রাফিক শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।

বিমানের এক পাইলট বলেন, প্রায় প্রত্যেকটি ফ্লাইটে রাডারের সঠিক সাপোর্ট ছাড়াই আমাদের উড়োজাহাজ নামাতে হয়। রাডারের সাপোর্ট ছাড়া উড়োজাহাজ অবতরণে অনেক বেশি সময় লাগে। বর্তমান রাডারটি ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত আকাশসীমা মনিটর করতে পারে। তাছাড়া বঙ্গোপসাগরের খুব নিচ দিয়ে যেসব ফ্লাইট পরিচালিত হয়, সেসব ফ্লাইট বেবিচকের মনিটরিং এড়িয়ে যেতে পারে।

জানা গেছে, ১৯৮০ সালের রাডার ব্যবস্থাটি ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এটি প্রতিস্থাপন করে নতুন রাডার বসানো জন্য ২০০৫ সাল থেকে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৭ সালের ১ মার্চ রাডার প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে সমালোচনা হয়। পরে এই অনুমোদন বাতিল করা হয়।

২০২১ সালে বেবিচক তার নিজস্ব অর্থায়নে এ-সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন পায়। এ ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা।

‘হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিএনএস-এটিএম (কমিউনিকেশন, নেভিগেশন ও সার্ভিল্যান্স-এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) সিস্টেমসহ রাডার স্থাপন’ নামের প্রকল্পের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২১ সালের অক্টোবরে ফ্রান্সের রাডার প্রস্তুতকারী কোম্পানি থ্যালেসের সঙ্গে চুক্তি করে বেবিচক।
উল্লেখ্য, ফ্রান্সের ‘থ্যালেস’ বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ সফলভাবে তৈরি করেছিল। তাছাড়া ‘থ্যালেস’ ১৯৮০ সালেও জিটুজির ভিত্তিতে বাংলাদেশে রাডার ও নেভিগেশন সিস্টেম চালু করে।