জাতীয় নির্বাচনে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অবশ্যই প্রয়োজন হবে: সিইসি

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সরকারের যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে এককভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন। আমরাও স্বীকার করেছি এবং জোর দিয়ে বলেছি, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সরকার বিদ্যমান থাকবে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা অবশ্যই প্রয়োজন হবে।
সোমবার (১৫ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশন এককভাবে কখনোই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে না, যদি সংশ্লিষ্ট সবাই, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো এবং একই সঙ্গে সরকারের যে প্রশাসন, পুলিশ আন্তরিকভাবে সহযোগিতা না করে। এতে নির্বাচন কমিশনের যে দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা তা সীমিত হয়ে পড়তে পারে। এটা আমরা উনাদের বলেছি।
সিইসি বলেন, অসংখ্য আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। সবকিছু আমলে নেওয়ার মতো হবে না। কারণ হচ্ছে, লোম বাছতে গিয়ে যদি কম্বল উজাড় করে ফেলি, সেটা খুব বাস্তব হবে না। আমি বলেছি, দিনশেষে মানুষ যেটা জানবে যে, নির্বাচনটা কেমন হলো। জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা জানিয়ে আমাদের বলেছেন, উনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এজন্য আমরা উনাদের ধন্যবাদ দিয়েছি। আমরা বলেছি, নির্বাচন যতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, ততই অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর মাধ্যমেই নির্বাচনে একধরনের ভারসাম্য গড়ে ওঠে, যার ফলে কাঙ্ক্ষিত অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের উদ্দেশ্য অনেকটা অর্জিত হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ইভিএমে সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না, এতে উনারা খুশি। তবে, এতে অনেক কিছু আছে বলেছে, আমরা তা মেনে নিইনি। আমরা বলেছি, তাহলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়নি। কারণ, সেটা ইভিএমে নয়, ব্যালটে হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যালটে নির্বাচন হলে কোনো অনিয়ম হবে না। যেমন: ২০১৮ সালেও হয়নি, আগামীতেও হবে না। ব্যালটে হোক আর ইভিএমে হোক, আমরা চেষ্টা করব নির্বাচন যাতে শুদ্ধ হয়।
‘পুলিশের ভূমিকার কথা উনারা বলেছেন, পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ, পুলিশ সরকারিভাবে এটা করে না। স্থানীয়ভাবে যে নির্বাচন হয়, সেখানে পুলিশকে পক্ষাশ্রিত করার জন্য প্রার্থীরাই চেষ্টা করে থাকে। সেখানে পুলিশকে কিভাবে নিউট্রালাইজ করা যায়, সেজন্য তারা আমাদের সহায়তা চেয়েছেন। আমরা বলেছি, আমরা চেষ্টা করব এবং সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে, সেটা সরকারকেও করতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্বাচনে হস্তক্ষেপ পাইনি। জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের যে সহায়তা এখন পর্যন্ত পেয়েছি, উনারা যদি একটা নিউট্রাল অবস্থানে থাকেন, তাহলে আমাদের পক্ষে নির্বাচন ভালোভাবে করা সম্ভব হবে। আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর চাপটা থাকবে।’
‘স্বচ্ছতার সার্টিফিকেট আমি তো প্রশাসন থেকে নেব না, মিডিয়া থেকে নেব। তাই, গাজীপুরে বলে এসেছি আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে, মিডিয়াকে যেন কোনো বাধা দেওয়া না হয়। আমরা মিডিয়ার ভূমিকাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন ভালো হবে, এটা আমরা দৃশ্যমান করতে চাচ্ছি। আমরা আশাবাদী, সরকারের সদিচ্ছা থাকবে এবং জাপার মহাসচিবকে বলেছি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আপনাদের করতে হবে। যদি ভালোভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন, তাহলেও নির্বাচনের শুদ্ধতা বিঘ্নিত হতে পারে।’