ক্যাম্পের জমি দখলে নিতে মামলা, আন্দলোনের ডাক বিহারিদের

মিরপুর ১০ নং সেকশনে অবস্থিত বিহারিদের শহীদ এ মিল্লাত ক্যাম্পের বাসীন্দাদের ওপর মিথ্যা মামলা দেয়ার অভিযোগ তুলেছে বিহারীরা। তার মামলায় দু'জন বিহারিকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই ক্যাম্প এলাকাগুলোতে বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পল্লবীর সেকশন ১০,১১ ও ১২ তে বিহারীদের ৩৯ টি ছোট-বড় ক্যাম্প রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা এ ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছে। কিন্তু ১৯৯৫ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ওই ক্যাম্পের জায়গাগুলোকে খালি জায়গা দেখিয়ে বহিরাগতদের মাঝে বরাদ্দ দিয়ে দেয়। এরপর থেকেই শুরু হয় বিহারিদের আবাসন বাঁচানোর লড়াই। জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে হামলা, মামলা, অগ্নিসংযোগ ও খুনের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
২০১৪ সালে পল্লবীর কালশীতে ৯ বিহারিকে আগুনি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার পর এ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে জায়গা খুঁজে বের করার জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। বিহারি ক্যাম্পের জায়াগাগুলো প্রায় ৪০০ জনের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সবাই বিহারিদের পুনর্বাসনের জন্য অপেক্ষা করলেও মরিয়া হয়ে উঠেছেন আইনজীবী মোঃ আব্দুল মোমিন।
নিজের প্লট উদ্ধারের কৌশল হিসেবে বিহারিদের বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা দিয়ে যাচ্ছেন। আদালত থেকে এ পর্যন্ত তিনি বিহারিদের বিরুদ্ধে ৩ টি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন। সবগুলো মামলাতেই ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ এনেছেন তিনি। বিহারি ক্যাম্প গুলো উচ্ছেদ না করতে আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থার আদেশ থাকলেও সেটা না মেনে নিজের মতো করে প্লট উদ্ধারের সব চেষ্টাই করে যাচ্ছেন এই আইনজীবী। এ পর্যন্ত তিনি ১০ টি পরিবারকে এইভাবে হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করে ক্যাম্পের জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য করে। কিছু পরিবারকে খুবই সামান্য টাকা দিয়ে ক্যাম্প থেকে বের করেছেন।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, মোঃ জামিল অভিযোগ করে বলেন, ২০০৮ সালে শহীদ এ মিল্লাত ক্যাম্পের বাসিন্দা জামিল, জাহিদ, মিঠু ও আশরাফের নামে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দেন এডভোকেট মোঃ আব্দুল মোমিন। এরপর ওয়ারেন্ট ইস্যু করিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করান। জামিনের চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। এরপর মামলার আসামিদের স্বজনদের কিছু টাকার বিনিময়ে ক্যাম্পের জায়গা ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন।সে পরিবারগুলো ক্যাম্প খালি করে দিলে জামিল, জাহিদ, মিঠু ও আশরাফের জামিনের ব্যবস্থা করেন এই আইনজীবী। ২০১৮ সালে একইভাবে ওই ক্যাম্পের বাসিন্দা মেরাজ,মমতাজ, সেন্টু, মোস্তফার বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা দেন মোমিন। মামলার পর গ্রেপ্তার করিয়ে সুকৌশলে তাদের জায়গা নিজের দখলে নিয়ে তাদেরও জামিনের ব্যবস্থা করে দেন তিনি।
চলতি বছরে আবারো ওই ক্যাম্পের বাসিন্দা জামিল, মেরাজ, মুন্না, জুয়েল ও কায়সারের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির মামলা দেন এই আইনজীবী। গত ৬ নভেম্বর এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিহারিরা। তাৎক্ষণিকভাবে গণভবনে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার জন্য ২ টি বাসে প্রায় শতাধিক বিহারিরা বেরিয়ে পরেন। পরে দারুসসালাম রোডে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে পুলিশি হেফাজতে বাড়ি ফিরেন বিহারিরা।
শহীদ এ মিল্লাত ক্যাম্পের বাসিন্দা মোঃ জামিল জানান, এডভোকেট মোমিন যেভাবে মামলার পর মামলা দিচ্ছে এতে আমাদের বসবাস করাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। আমাদের সবার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। আমরা বাসায় থাকতে পারিনা। এমন সময় আমাদের বাসায় গিয়ে মহিলাদের হুমকি দেয়। মাঝে মাঝে কুপ্রস্তাবও দেয়। একজন আইনজীবীর কাছে এমন কিছু প্রত্যাশা করিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য এডভোকেট মোনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এদিকে এডভোকেট মোমিন কর্তৃক দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ গ্রেপ্তারকৃতদের নিৎশর্ত মুক্তির দাবিতে মিরপুর সেকশন ১০ ব্লক এ শহীদ এ মিল্লাত ক্যাম্পের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিহারিদের সংগঠন উর্দু স্পীকিং পিপলস ইয়ুথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্ট।