শরণখোলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন, জনমনে আতঙ্ক

মৌসুমের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত শুরুর আগেই উপকূলীয় বেড়িবাঁধের নির্মাণাধীন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের গাবতলা ও বগী গ্রাম অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে। অতিদ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত না হলে ওই দুই গ্রামের অনেক অংশ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলছে, ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ টেকসই বেড়িবাঁধটির প্রায় ৬০ কিলোমিটার নির্মাণ সম্পন্ন হলেও ৩৫/১ পোল্ডারের বগী ও গাবতলা গ্রামের পাশের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হয়নি। নদী শাসন সংক্রান্ত জটিলতায় এ অংশটুকুতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ সম্ভব না হওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার (০৮ মে) সকালে বলেশ্বর পাড়ের গাবতলা-বগী গ্রাম সংলগ্ন বাঁধের ৪০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের (সিইআইপি) কর্মকর্তারা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ওই স্থানে জরুরি ভিত্তিতে শনিবার (০৯ মে) থেকে রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়ে যান তারা। তবে যতো দ্রুত সম্ভব নদী শাসন করে এই অংশে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী।
২০০৭ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার মানুষের জানমালের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। তখন থেকেই ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে এই দুই উপজেলাবাসীর একটাই দাবি ছিল, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার ২০১৫ সালে ‘উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি)’ হাতে নেয়। জমি অধিগ্রহণের পর ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে চলছে বেড়িবাঁধ ও স্লুইচগেট নির্মাণ।
স্থানীয় আব্দুল কাদের বলেন, ‘বাপ-দাদার জমি সব বলেশ্বর নদীর ভাঙনে চলে গেছে। আজ সকালে হঠাৎ করে দুই বিঘা জমিসহ বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। ভাঙনের কবলে পড়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
লতিফ, বাবুল, রহিমসহ আরও কয়েকজন বলেন, ‘এখনও বাঁধের অনেক জায়গায় ভাঙন রয়েছে। দ্রুত এখানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে আমাদের বাঁচার ব্যবস্থা করে দিন।’
সাউথখালি ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, ‘সিডরের পরে আমাদের একটাই দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। শরণখোলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে এর নির্মাণ কাজ চললেও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বগী ও গাবতলা গ্রাম অরক্ষিত রয়ে গেছে। নদী শাসন না করায় এই দুই গ্রামের অংশের বেড়িবাঁধ বার বার ভেঙে যায়। প্রতি বছর বৃষ্টির মৌসুমে ভাঙলেও এবার একটু আগেই ভাঙন শুরু হয়েছে। অতিদ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এলাকার জমি ও ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’
সিইআইপি’র প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আকস্মিক ভাঙনে প্রায় ৪০ মিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। যতো দ্রুত সম্ভব এই স্থানে একটি রিং বেড়িবাঁধ দেওয়া হবে।’
রিং বেড়িবাঁধ দেওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ টেকসই বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ করার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান বলেন, ‘৩৫/১ পোল্ডারের অধিকাংশ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। বগী ও গাবতলা গ্রামের দুই কিলোমিটার অংশে নদী শাসন ও জমি অধিগ্রহণ জনিত কিছু সমস্যা রয়েছে। যার ফলে ওই স্থানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও আমরা ওই স্থানে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
নতুন সময়/এআর