ঢাকা সোমবার, ২১শে জুলাই ২০২৫, ৭ই শ্রাবণ ১৪৩২


করোনার কনিষ্ঠযোদ্ধা খেলাঘরের রুদ্রজিৎ


৩ মে ২০২০ ০৩:৪১

করোনা প্রতিরোধযুদ্ধে নেমেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ৬ বছরের শিশু রুদ্রজিৎ পাল। মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে করণীয়সহ সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে উপজেলাজুড়ে মাইকিং এবং নিজের হাতে লেখা সচেতনতামূলক লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করছে শিশুটি।

উপজেলার নববন্ধন খেলাঘর আসরের সভ্য রুদ্রজিৎ। তাই সে এ মহৎ কাজের সূচনা করেছে খেলাঘরের ৬৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনটিতে। শনিবার (২ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অটোরিকশায় চড়ে বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে মাইকিং করে। টানা প্রায় তিন ঘণ্টা মাইকে রুদ্রজিৎ বার বার বলেছে, ‘শুনুন শুনুন শুনুন। একটি ঘোষণা শুনুন। আপনারা স্বাস্থ্য সচেতন থাকবেন। অকারণে ঘর থেকে বের হবেন না। ঘর থেকে বের হলে মুখে পরুন মাস্ক, হাতে পরুন গ্লাভস। দূরত্ব বজায় রাখবেন। নিয়মিত হাত ধোবেন। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।'

মাইকিংয়ের পাশাপাশি উপজেলার প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে নিজের হাতে লেখা সচেতনতামূলক লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করে রুদ্রজিৎ। তার এমন অভিনব উদ্যোগের প্রশংসায় সরব হয়েছেন আখাউড়াবাসী। উচ্ছুসিত অনেকেই বলেন, ‌ ‘মাত্র ছয় বছরের এই শিশুটির সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম আমাদের বিবেককে নাড়া দেবে, জাগ্রত করবে।'

আখাউড়া পৌর এলাকার রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা নববন্ধন খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক ও খেলাঘর জাতীয় পরিষদ সদস্য বিশ্বজিৎ পাল বাবুর সন্তান রুদ্রজিৎ পাল স্থানীয় মেধা বিকাশ প্রি- ক্যাডেট স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। কাকা প্রসেনজিৎ পাল সান্টু ও সুরজিত পাল অর্ণব এবং ধারাভাষ্যকার হিসেবে পরিচিত খোরশেদ আলম বাবু এ কার্যক্রমের সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

রুদ্রজিতের বাবা দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ পাল বাবু বলেন, 'টিভি দেখে সে স্বাস্থ্য সচেতনতার ডায়ালগ মুখস্থ করে প্রায়ই বাসায় বলতো। পরে মুখস্থ করা ডায়ালগ কাগজে লিখলো। সঙ্গে নিজের পরিচিতির কথা যোগ করে দিলাম। লিফলেটের পাশাপাশি মাস্ক বিতরণের আবদার করলে সেটিও দেওয়া হয় ।’

শিশু রুদ্রজিতের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা বলেন, এটি একটি ভালো উদাহরণ আখাউড়াবাসীর জন্য। স্বাস্থ্য সচেতনতায় মাইকিংয়ের পাশাপাশি নিজের হাতে লেখা লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করছে। আশা করি, এই শিশুর আহবানে সাড়া দিয়ে মানুষ সচেতন হবেন।'

আখাউড়া পৌরসভার মেয়র মো. তাকজিল খলিফা বলেন, ‘শিশু রুদ্রজিতের এই কার্যক্রম আমাদেরকে বিবেককে নাড়া দেবে, জাগ্রত করবে। আশা করবো, ওই শিশুর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে চলবো। সত্যিই তার উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।'

আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়াকে লিফলেট দেওয়ার সময় তিনিও এ কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। রুদ্রজিতের হাতে শুভেচ্ছা উপহার তুলেন দেন জেলা পরিষদের সদস্য মো. আতাউর রহমান নাজিম। আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক অধ্যক্ষ মো. জয়নাল আবেদীন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হালিম হেলাল, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম, উপজেলা খাদ্য নিয়মন্ত্রক সজীব কাউছার, যুবলীগ নেতা আব্দুল মমিন বাবুল, মো. মনির খান, আবু কাউছার ভূঁইয়া, মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন, দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিনসহ নেতাদের মাঝেও লিফলেট বিতরণ করেও প্রশংসা পেয়েছে রুদ্রজিৎ। পুলিশ পরিদর্শক আরিফুল আমীনের স্ত্রী সালেহা নাসরিন আরিফ, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন বেগ শাপলু ও সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন নয়নসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা তাকে দাঁড় করিয়ে ভিডিও করেন ও ছবি তোলেন।

মেধা বিকাশ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম সাগরও বেশ খুশি হয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে এটি আলোচিত ঘটনার মধ্যে একটি।’ তার পড়াশোনা ও মেধার বিষয়েও প্রশংসা করেন রুদ্রজিতের এই শিক্ষক।

নতুন সময়/এআর