বঙ্গবন্ধুর খুনি কে এই মাজেদ ?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যায় খুনিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ। অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে তিনিও বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় সরাসরি অংশ নেন। এছাড়া জেলহত্যার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। পাঁচত্তরের পরে বিভিন্ন সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করেছেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করলে তিনি আটক হওয়ার ভয়ে আত্মগোপন করেন। দেড় যুগের বেশি সময় ছিলেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে।
শনিবার রাতে ফাঁসি কার্যকর হতে যাওয়া মাজেদের বাবা মৃত আলী মিয়া চৌধুরী। মাতা মৃত মেহেরজান বেগম। তাদের পৈত্রিক নিবাস ভোলার বোরহানউদ্দিন থানার বাটামার গ্রামে।
দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর এই আত্মস্বীকৃত খুনি মঙ্গলবার ভোরে মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) একটি দল। গত মাসে দেশে ফিরে মাজেদ স্ত্রীর ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকার এক নম্বর রোডের ১০/এ বাড়িতে থাকছিলেন। চার মেয়ে ও এক ছেলে আছে তার।
শনিবার রাতে কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হবে আব্দুল মাজেদের। ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত এবং মঞ্চের লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাইরেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো শনিবার মাজেদের স্বজনদের দেখা করতে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা জেল গেটে যাননি।
কার্যকর করতে জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে জল্লাদের একটি দল তৈরি করেছে ঢাকা জেল কতৃপক্ষ। সেই তালিকায় রয়েছে জল্লাদ মোহাম্মদ আবুল, তরিকুল ও সোহেল সহ ১০ জনের নাম।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নং রোডের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আব্দুল মাজেদ অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে সরাসরি অংশ নেন। হত্যা শেষে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার অপর আসামি মেজর শাহরিয়ার এবং হত্যাকাণ্ডে অংগ্রহণকারী অন্যান্য সেনাসদস্যদের সাথে রেডিও স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি সামরিক অভ্যুত্থান করা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বঙ্গভবনে দেশত্যাগ করার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
৩৪ বছর পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। খুব ধীরে দীর্ঘ বারো বছরে নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে আইনের প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছতার সঙ্গে অতিক্রম করে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্বঘোষিত খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাপ্টেন মাজেদকে পুরস্কৃত করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীরা জিয়াউর রহমানের আদেশে বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকক হয়ে লিবিয়ায় যান। সেখানে তিনি ৩ মাস থাকেন। জিয়া ক্যু করা অফিসারদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বৈদেশিক বদলী করেন। তারই অংশ হিসেবে ক্যাপ্টেন মাজেদকে সেনেগাল দূতাবাসে বদলীর আদেশ দেন।
১৯৮০ সালে তাকে বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেন এবং উপসচিব পদে যোগদানের সুবিধার্থে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। পরে আব্দুল মাজেদকে সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। এরপর তিনি মিনিস্ট্রি অব ইয়ুথ ডেভলপমেনেট ডাইরেক্টর, ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট পদের জন্য আবেদন করেন এবং ওই পদে যোগদান করেন। সেখান থেকে তিনি ডাইরেক্টর এন্ড হেড অব ন্যাশনাল সেভিংস ডিপার্টমেন্টে বদলি হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করলে আটকের ভয়ে আত্মগোপন করেন আব্দুল মাজেদ। ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে সঘোষিত খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাবন্দি পাঁচ আসামির ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ফাঁসি কার্যকর হয়। তারা হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ছয় আসামি পলাতক ছিলেন, তাদের মধ্যে আব্দুল মাজেদও।
পলাতক বাকি পাঁচজনের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশিদ (বরখাস্ত) লিবিয়া ও বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন। বেশিরভাগ সময় লিবিয়াতে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম (বরখাস্ত) পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী (বরখাস্ত) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে, লে. কর্নেল (অব.) এন এইচ এমবি নূর চৌধুরী (বরখাস্ত) কানাডায় রয়েছেন। আর রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতের কারাগারে আটক বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।