ঢাকা সোমবার, ৩০শে জুন ২০২৫, ১৭ই আষাঢ় ১৪৩২


যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগে শুদ্ধি অভিযান হবে কি


২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:২৯

ছবি সংগৃহীত

শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনা মঞ্চের আসন ভাগাভাগি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
প্রায় আট বছরের বেশি সময় ধরে একই কমিটি নিয়ে চলছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। বহু আগেই শেষ হয়েছে বর্তমান কমিটির মেয়াদ। গত কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর নতুন কমিটি দেয়ার জোর গুঞ্জন শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির কোনো ঘোষণা দেননি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফরকালে প্রতিবছরই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে জোর গুঞ্জন শুরু হয় দেশটির আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি নিয়ে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে শেখ হাসিনার নতুন কমিটির ঘোষণা না আসায় নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।


শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফরে সরগরম হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। দাবি উঠেছে নুতন কমিটির। দাবি উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের। একদিকে যেমন সিদ্দিক হঠাও আন্দোলনে উত্তাল হয়ে আছে পুরো যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন স্টেটে ঢুকে পড়া অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দলের ভেতরে বাইরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর প্রতি জোর দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

আর এ দাবিতে প্রতিদিনই সভা সমাবেশে জোরদার হচ্ছে আন্দোলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক এসেছেন। গত কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে কমিটি নিয়ে বিভক্তি এখন চরম পর্যায়ে।

এবারের বিভক্তি অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় তীব্র। বিভক্ত দুটো গ্রুপের মধ্যে একটির নেতৃত্বে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। অন্যটির নেতৃত্বে রয়েছেন উপদেষ্টা ড. প্রদীপ রঞ্জন কর। বিভক্তি এত চরম আকার ধারণ করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলন পর্যন্ত ডেকেছিলেন ড. প্রদীপ রঞ্জন কর।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে ডাকা এই কর্মী সম্মেলন সম্প্রতি সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মী সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন।

বক্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনায় ড. সিদ্দিকুর রহমান যেন না যান এবং সভাপতিত্ব না করেন। তিনি সভাপতিত্ব করতে গেলে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য ড. সিদ্দিকুর রহমানকেই দায়ী থাকতে হবে দাবি করা হয়। এ ছাড়াও ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অশোভন ভাষায় স্লোগানও দেয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ড. সিদ্দিকুর রহমান রয়েছেন ৮ বছর ধরে। যুক্তরাষ্ট্র বিদ্রোহী গ্রুপের দাবি এবার সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেয়া হোক। বিদ্রোহী গ্রুপের একজন নেতা দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাদের বৈঠক হয়েছে, তিনি বলেছেন তার গণসংবর্ধনায় যেন কোনো ঝামেলা না হয়, তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেবেন।

অন্যদিকে সিদ্দিকুর রহমানের পক্ষের গ্রুপ বলছেন, আমরা জানি না নেত্রী কমিটি দেবেন কি না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউ ইয়র্ক আগমনের আগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল। সেই সময় ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ একটি স্বল্পকালীন অফিসও নিয়েছিল জ্যাকসন হাইটসে।

সেই সময়ও দুই গ্রুপের উত্তেজনায় মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনায় বিদ্রোহী গ্রুপের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। পরে অবশ্য সেই মামলা তুলে নেয়া হয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনা সভায় তিনি আসার সাথে সাথেই ’নো মোর সিদ্দিক’, ’নো মোর সিদ্দিক’ স্লোগানে পুরো অডিটোরিয়ামে অন্যরকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেই স্লোগানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চরম বিরক্ত হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার ধমকে সেই স্লোগান বন্ধ হয়। প্রধানমন্ত্রী ধমক দিয়ে স্লোগান বন্ধ করেছিলেন কিন্তু কোনো কমিটি দেননি।

একটি সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে বিদ্রোহী গ্রুপের কয়েকজন নেতা বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং তারা ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবার নতুন কমিটি দেবেন।

অন্যদিকে আরেক সূত্রে জানা গেছে, কমিটি দেয়া নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর। তিনি ইচ্ছা করলে কমিটি দিতে পারেন, আবার নাও দিতে পারেন। যদি নেত্রী তার শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি দিয়েই দেন তাহলে এই নতুন কমিটিতে কারা অন্তর্ভুক্ত, কে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বে এ নিয়ে জল্পনা কল্পনারও শেষ নেই।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে সম্ভাব্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন- যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সভাপতি ড. খন্দকার মনসুর, প্যানসালবানিয়ার ডা. জিয়া উদ্দীন, ফ্লোরিডা আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান. ডা. মোহাম্মদ আলী মানিক, ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, দারা বিল্লাহ, হেলালুল করিম, সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, ওসমান গনি প্রমুখ।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের সিনিয়ার সহ-সভাপতি শিবির আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা আইরীন পারভীন, দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহ বখতিয়ার, কমিটির সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে প্রতিবারের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে পরিবর্তন চাইছে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তবে এবারও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি হবে কি না এ ব্যাপারে কেউ কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। নতুন কমিটি হবে কি হবে না তা নির্ভর করছে শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের সিদ্ধান্তের উপর।