২২ বিদ্রোহীকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী গ্রুপের ২২ সদস্যকে শুক্রবার বিকেলে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এসব সদস্য মনিপুর ও আসামে ওয়ান্টেড ছিল। তাদেরকে মিয়ানমার থেকে একটি বিশেষ বিমানে করে ভারতে নিয়ে আসা হচ্ছে। বিষয়টি জানেন এমন সূত্র হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন এসব তথ্য। তারই ওপর ভিত্তি করে একটি এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস। বিদ্রোহীদের নিয়ে মিয়ানমার থেকে একটি বিমান উড্ডন করার পর সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, এটা মিয়ানমার সরকারের বিশাল এক পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতার প্রতিফলন ঘটল। বিমানটির প্রথমে অবতরণ করার কথা মনিপুরের রাজধানী ইম্ফলে।
এরপর তা যাত্রা করার কথা আসামের গোয়াহাটিতে। এ দুটি স্থানে দুই রাজ্যের স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার কথা রয়েছে এসব বিদ্রোহীকে। এই অপারেশন চালানোতে ভূমিকা আছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের। নিরাপত্তা পরিকল্পনাকারী একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যদের ভারতের হাতে তুলে দেয়ার অনুরোধে এটাই প্রথম সাড়া মিয়ানমার সরকারের। এটাকে দেখা হচ্ছে দুই দেশের গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির ফল হিসেবে। যাদেরকে ফেরত দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ভারতের বিদ্রোহী সিনিয়র ও দীর্ঘদিনের ওয়ান্টেড কিছু নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন এনডিএফবি(এস)-এর স্বঘোষিত হোম সেক্রেটারি রাজেন দাইমারি, ইউএনএলএফের ক্যাপ্টেন সনাতোম্বা নিঙ্থুজা এবং প্রিপ্যাক (প্রো)-এর লেফটেন্যান্ট পশুরাম লাইশ্রাম। ২২ বিদ্রোহীর মধ্যে ১২ জন মনিপুরের চারটি বিদ্রোহী গ্রুপ ইউএনএলএফ, প্রিপ্যাক (প্রো), কেওয়াইকেএল এবং পিএলএ’র সদস্য। বাকি ১০ জন আসামের এনডিএফবি(এস) এবং কেএলও’র সঙ্গে যুক্ত। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের রয়েছে ১৬০০ কিলোমিটার সীমান্তপথ। সেগুলো অনেক স্থান বিদ্রোহীদের জন্য সুবিধাজনক অঞ্চল, ক্যাম্প স্থাপনের জন্য। সেখানে অবস্থান নিয়েই কয়েক দশক ধরে তারা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালাতে রাজি হওয়ার পর গত দু’তিন বছরে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর ভারতের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর দেয়া নিখুঁত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ জুড়ে টানা অপারেশন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা প্রথম দফায় অরুণাচল প্রদেশের বিজয়নগরের কাছে টাগা ক্যাম্পে অভিযান চালায়। এরপর আরাকান, নীলগিরি ও হাউকিয়াতে দ্বিতীয় অভিযান চালায়। এসব অপারেশনে সাগাইং রিজিংনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযানে আটক করে ২২ বিদ্রোহীকে। নিরাপত্তা বিষয়ক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ন্যাপিড এবং নয়া দিল্লির মধ্যে বিদ্রোহীদের হস্তান্তরের মাধ্যমে বিরাট এক বার্তা দেয়া হলো। ভারতীয় কর্মকর্তারা প্রত্যাশা করেন, সীমান্ত এলাকায় ঘন জঙ্গলে অবস্থান নেয়া এসব গ্রুপের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। ঠিক এমন একটি কাজই করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই দেশটিকে এক সময় ভারতীয় অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এরপরই তারা ভারতীয় অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ফেরত পাঠানো শুরু করে। পাকিস্তান যদি এমন কাজ করতো তাহলে কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপই থাকতো না বলে মনে করেন একজন সিনিয়র নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তা।