র্যাবের অভিযানে ৫০ কেজি গাঁজাসহ ১টি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার

র্যাব-১ কর্তৃক গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী হতে অভিনব কায়দায় মাদক পরিবহনকালে আন্তঃজেলা মাদক ব্যবসায়ী চক্রের প্রধান প্রদীপ লাল ও তার সহযোগী আবু তাহের গ্রেফতার ॥ ৫০ কেজি গাঁজাসহ ০১ টি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার।
মাদক মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় র্যা ব-১, উত্তরা, ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে যে, বেশ কিছুদিন ধরে একটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র দেশের বিভিন্ন স্থান হতে মাদক দ্রব্য কৌশলে রাজধানীতে নিয়ে আসছে। চক্রটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। কখনো যাত্রীবাহী বাসে করে, কখনো পঁচনশীল মৌসুমী শাক-সবজি বহনকারী ট্রাকে করে, কখনো ধান, ভূট্টা বহনকারী গাড়িতে করে, আবার কখনো কখনো ব্যক্তিগত গাড়িতে করে মাদক দ্রব্য রাজধানীতে নিয়ে আসছে বলে জানা যায়।
সর্বশেষ তথ্যমতে জানা যায় যে, হবিগঞ্জ হতে মাদকের একটি বড় চালান ঢাকার উদ্দেশ্যে আসছে। ফলশ্রুতিতে মাদক ব্যবসায়ী চক্রটিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যা ব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং মাদক দ্রব্যের চালানটির গতিবিধি অনুসরণ করার লক্ষ্যে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে আভিযানিক দলটি গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন গাজীপুর-নরসিংদী রোডে মাদক দ্রব্য বহনকারী কাভার্ডভ্যানের অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ২৮ মে ২০১৯ ইং তারিখ আনুমানিক ০১০০ ঘটিকায় র্যা ব-১, উত্তরা, ঢাকা এর আভিযানিক দলটি জিএমপি গাজীপুর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন মরকুন টিএন্ডটি বাজার এলাকায় পাকা রাস্তার উপর অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সদস্য ১) প্রদীপ লাল দাস (৪৩), পিতা- কানু লাল দাস, মাতা- সুনুতি রাণী দাস, সাং- বড়াইল, ওয়ার্ড নং-০২, থানা- চুনারুঘাট, জেলা- হবিগঞ্জ, ২) মোঃ আবু তাহের মিয়া (৩০), পিতা- মোঃ আবজল মিয়া, মাতা- মোছাঃ সুফিয়া খাতুন, সাং- সাং- বড়াইল, ওয়ার্ড নং-০২, থানা- চুনারুঘাট, জেলা- হবিগঞ্জ’দ্বয়কে গ্রেফতার করে। এসময় ধৃত আসামীদের নিকট থাকা মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যানের গোপন প্রকোষ্ঠ হতে ৫০ কেজি গাঁজা, মাদকদ্রব্য গাঁজা ক্রয়-বিক্রয়ের কাজে ব্যবহৃত ০২ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় এবং মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যানটি জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ধৃত আসামী প্রদীপ লাল দাস পেশায় একজন ড্রাইভার। ২০ বছর যাবত সে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক চালায়। বিগত ০২ মাস পূর্বে সে মাদক পরিবহনকালে ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার হিসেবে নিযুক্ত হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ফাঁকি দিয়ে মাদক পরিবহনের জন্য কাভার্ডভ্যানের সামনের বডির মধ্যে গোপন প্রকোষ্ঠ তৈরী করে। উক্ত প্রকোষ্ঠটি বাইরের দিক থেকে কখনো বোঝা যায় না। ভেতরে বিশেষ স্কু ও নাটের মাধ্যমে উক্ত প্রকোষ্ঠ খুলে মাদক পরিবহন করত।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রদীপ লাল দাস আরোও জানায় যে, উল্লেখিত গাঁজার চালানটি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট এলাকার দুর্ঘম পাহাড়ি এলাকা দিয়ে ভারত হতে বাংলাদেশে এসেছ। ভারত হতে আনার পর চুনারুঘাট থানাধীন সাতছড়ি পাহাড়ে উক্ত মাদকদ্রব্যের চালান সে তার গাড়ীর গোপন প্রকোষ্ঠে রেখে দেয়। পরবর্তীতে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানাধীন অলিপুর বাজার হতে ধানের চালান সংগ্রহ করে উক্ত কাভার্ডভ্যানটিতে ধান লোড করে। সে ধানগুলো গাজীপুরের মাওনায় আনলোড করার পর গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে গাঁজার চালানটি হস্তান্তর করার কথা ছিল। সে আরোও জানায় যে, ইতিপূর্বে সে ১৫ কেজি গাঁজার একটি চালান গাজীপুরের টঙ্গীতে হস্তান্তর করেছিল।
ধৃত অপর আসামী আবু তাহের পেশায় একজন ট্রাক্টর চালক। সে ১০ বছর ধরে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এলাকায় ট্রাক্টর চালায়। বর্তমানে ট্রাক্টরের ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম থাকায় সে তার গ্রামের প্রদীপ লাল দাস কে কাজ দেয়ার জন্য বলে। প্রদীপ লাল দাস এই সুযোগে তাকে মাদক ব্যবসায় সহযোগীতা করার প্রস্তাব দেয়। সে তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে মাদক ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করে। উল্লেখিত মাদকদ্রব্যের চালানটি তারা দুজনে হবিগঞ্জ হতে গাজীপুরের শ্রীপুরে নিয়ে যাচ্ছিল বলে জানায়।
নতুনসময়/আইআর