ঢাকা শনিবার, ২৮শে জুন ২০২৫, ১৫ই আষাঢ় ১৪৩২


চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে ত্রাণ অনিয়ম ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে


১৭ মে ২০২০ ১৮:৩৮

সম্প্রতি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারি বরাদ্দকৃত ত্রাণ বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কালাম মৃধার বিরুদ্ধে। একই সাথে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন মানুষের উপর নির্যাতন করে চলছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মদাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল আলীম খান। শনিবার (১৬ মে) রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অভিযোগের রিসিভ করা একটি কপি আমাদের হাতে এসেছে।

অভিযোগে আবেদনকারী যা লিখেছেন তা হলো- মদাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কালাম মৃধা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনে আমরা আতঙ্কিত। কালাম মৃধার পূর্ব পরিচয় হলো তিনি একজন রাজাকার পরিবারের সন্তান। তার চাচা কুটিমনি মৃধা রাজাকার বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিল। ১৯৭১ সালে কুটিমনি মৃধা অনেক নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করার সহযোগিতা করেছে। কুটিমনি মৃধার অত্যাচারে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক লোক দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছে।

কালাম মৃধার বড় ভাই সালাম মৃধা ১৯৮৭ সাল থেকে পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিল। মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানা লুটের একজন সদস্য ছিল। শ্রীপুর থানার অস্ত্র লুট করে সেই অস্ত্র দিয়ে এলাকায় ছানোয়ার মেম্বার, জনাব আলী সহ অনেক লোককে হত্যার সহযোগিতা করেছে। সর্বহারা পার্টির দাপটে অনেক মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে। নৃশংসভাবে মারধর করে জোরপূর্বক জমি দখল করেছে।

কালাম মৃধা চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে তার ছোট ভাই বিল্লাল মৃধা তার বাহিনী দিয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসা, গরু চুরি ও জমি দখল করে অনেক টাকার মালিক হয়েছে। তার বাহিনীর সদস্যরা ইয়াবা, গাজাসহ অনেকে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। কিন্তু কালাম মৃধা তার ভাইয়ের ভাইরা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম তার আত্মীয় হওয়ার কারণে সবজায়গা থেকে পার পেয়ে যায়। বিল্লাল বাহিনীর অন্যতম সদস্য আজাদ কসাই গরু চুরি চক্রের মূল হোতা। সে বর্তমানে তিনটি গরুসহ ধরা পড়ে জেল হাজতে আছে। আজাদ কসাই বিল্লালের বাড়িতে থেকেই গরু চুরি করতো।

কালাম মৃধার আত্মীয় যশোরের সন্ত্রাসী ইলিয়াস। সে বর্তমানে মদাপুরে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অবস্থান করছে। ইলিয়াস তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। সাধারণ লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে।

গত ইউপি নির্বাচনে কালাম মৃধা ইলিয়াস সন্ত্রাসীকে দিয়ে অর্ধশত সন্ত্রাসী জোগাড় করে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীকে প্রকাশ্য দিবালোকে জনসম্মুখে মারধর করে মৃত ভেবে গান্ধিমারা বাজারের পাশে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। এছাড়াও বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ভাংচুর করে। নির্বাচনে কোন লোককে তার বিরুদ্ধে মাঠে থাকতে দেয় না। ভোট ডাকাতি করে নির্বাচিত হয়। যাহা তদন্তে প্রমানিত হবে।

নির্বাচিত হয়ে এলাকায় কোন উন্নয়নমূলক কাজ না করে সরকারি যত ধরণের সাহায্য ও উন্নয়নমূলক কাজের টাকা এসেছে তা আত্মসাৎ করেছে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম তার আত্মীয় হওয়ায় সরকারি টাকা, চাল-গম আত্মসাৎ করলেও কাজী সাইফুল ইসলাম কোন প্রতিকার করেননি।

কালাম মৃধা তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় যা ইচ্ছা তাই করছে। তার বাহিনী সরকারি গাছ কেটে বিক্রি, অন্যের জমি দখল করে মাটি কেটে দিঘী বানিয়েছে। অন্যের জামির উপর দিয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রাস্তা তৈরী করেছে। তার এই সকল অপকর্মের বিরোধিতা করার জন্য তার বাহিনী দিয়ে ঘর-বাড়ি পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয়। কিছুদিন আগে ইউসুফ নামে একজন সাবেক পুলিশ সদস্যের গোয়াল ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় ফলে তার গরুসহ ঘর পুড়ে যায়।

এ মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান কালাম মৃধা ও তার বাহিনীর সদস্যরা জেল খেটেছে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এলাকায় তার বিরুদ্ধে যাহারা কথা বলবে তাদেরকে দেখে নিবে বলে হুমকি দিচ্ছে। তাই কালাম মৃধা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এলাকায় বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

কালাম মৃধার আরও এক ভাই আলাল মৃধা শিল্প মন্ত্রণালয়ে চাকুরি করে। সে এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করে। তাদের কাজ হল অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিতে তার ভাই কালাম মৃধাকে পাহাড়া দেয়ার। আলাল মৃধা শিল্প মন্ত্রণালয়ে চাকুরি করলেও সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকুরি করে বলে নিজেকে পরিচয় দেয়। তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসা করায় এবং বলে যে, আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকুরি করি তোরা মাদক ব্যবসা করবি আমি তোদেরকে শেল্টার দিব।

বর্তমানে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায়দের সহায়তা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ত্রাণ কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। যা স্ব স্ব ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিলি বিতরণ করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতেও কালাম মৃধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে অমান্য করে ত্রাণ বিতরণে নানা অনিয়ম করেছেন। যে কারণে প্রকৃত অসহায় ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার ত্রাণ সামগ্রী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে সরকারের যে ত্রাণ সামগ্রী তা কালাম মৃধা বিতরণে নানা অনিয়ম করছেন। যেকারণে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে মদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান কালাম মৃধা বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা ।