ঢাকা শনিবার, ২৮শে জুন ২০২৫, ১৫ই আষাঢ় ১৪৩২


গাউছিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী কমল ও দুর্জয়ের আর্তনাত


১৬ মে ২০২০ ০৪:০৭

ছবি সংগৃহীত

গতকালই ১৬লাখ টাকা মালামাল তুলেছি। চোখের সামনেই পুড় ছাই হয়ে গেল আমার দোকানে রাখা মোট পঁচিশ লাখ টাকার মালামাল, আমার করার কিছুই ছিলোনা। এভাবে বলতে বলতেই পোড়া মালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ী কমল মাটিতে পড়ে যায়। এর মধ্যেই পাশেই শোনা যায় আর একজনের আর্তনাত, সে হলো পুড়াবো এলাকার মুত অভিনাসের ছেলে দুর্জয়ের কান্না, তার দোকানেরও কিছু নাই, চোখের সামনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেল। জানা যায় গতদুই মাস আগে সন্ত্রাসীরা তার বাবা অভিনাসকে দিনের বেলায়ই কুপিয়ে হত্যা করেছে। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এখন আবার পুড়ে ছাই হলো বাবার রেখে যাওয়া শেষ সম্ভলটুকু গাউছিয়া মার্কেকের দোকানটি। এ যেন বিধাতার নির্মম পরিহাস। একেবারে যেন মরার পরে খাড়ার ঘা।
জীবন যুদ্ধে দুর্জয় যেন এক পরাজিত সৈনিক হয়ে বেঁচে আছে। বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক আহসান উল্লাহ ১৬লাখ টাকা মাল তুলেছিল দোকানে, সেও সব হারিয়েছে বলে কেঁদে ফেলে।
শহিদুল্লাহ মুদি ব্যবসায়ী তারও ঈদ উপলক্ষে তুলছে মাল। তারও কয়েক লাখ টাকার মাল পুড়েছে। এভাবে আহসান, শহিদুল্লাহ, রহমান, কমল ও দুর্জয়ের মত অনেকেই এ বাজারে ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে চলছিল। কিন্তু আজ ঈদের ঠিক আগ মুহ্রতে এসে সব শেষ
করে দিয়ে গেল আগুনে লেলিহান শীখা। কোন ক্রমেই থামাতে পারলোনা তিনটি ফায়ার সার্ভিসের তিন তিনটি ইউনিটের সদস্যরা। এ যেন মার্কেটের ব্যবসীদের জন্য বিধি বাম। ঘটে যাওয়া ঘটনা খুজতে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

মোট কথা রূপগঞ্জ উপজেলার সর্ববৃহৎ গাউছিয়া মার্কেটের কাঁচা বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে নগদ টাকাসহ কয়েক কোটি টাকার মালামাল ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকেল সাড় ৪টার দিকে লাগা আগুনে ফুটপাতসহ বাজারের প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানপাট পুড়ে গেছে। এসময় ব্যাপক লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগুনের ঘটনায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন মার্কেটের ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়াল মোল্লা।

জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে গাউছিয়া মার্কেট বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ওই মার্কেটটি খোলা ছিলো। সর্ট সার্কেটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ধারনা করছেন। এ সময় গাউছিয়া মার্কেটের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের সাহায্যে মার্কেটে নিয়োজিত আনসার ও কর্মীরা আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। জানা যায় কোন এক পথচারী বেলা সাড়ে টার দিকে মহাসড়ক থেকে আগুনের ধোয়া দেখাতে পেয়েই ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা চায়। পরে সেখানে থেকে ফায়ার সার্ভিসের রূপগঞ্জের কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিস, ইপিজেড ও আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট খবর দেয়। এসকল ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো উপস্থিত হয়ে প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে শতার্ধিক দোকানপাট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দোকানে ঈদের জন্য মালামাল ভর্তি করে রাখায় ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা দাবি করেন।

মার্কেটের ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়াল জানান, গাউছিয়া কাঁচাবাজারে বেশ কয়েকটি ওষুধের পাইকারী দোকানসহ অর্ধশতাধিক মুদি মনোহরী দোকান রয়েছে। চাউলের বেশ কয়েকটি আড়ৎ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে দুপুর আড়াইটায় দোকানপাট বন্ধ করে গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। বিকেলের দিকে বিদ্যুতের সর্ট সার্কেটে আগুনের সুত্রপাত হতে পারে। কিছু সময়ের মধ্যেই আগুণ পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে এলাকা কালো ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশ, মার্কেটের সিকিউরিটি, পথচারী ও ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট প্রায় দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে।