ঢাকা রবিবার, ২৯শে জুন ২০২৫, ১৬ই আষাঢ় ১৪৩২


চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ


২১ এপ্রিল ২০১৯ ২০:৩৭

ছবি সংগৃহীত

পুলিশের এলিট ফোর্স- র‌্যাব বলছে, চাকরি দেবার নাম করে প্রতারক চক্রটি গত চার বছরে পাঁচ শতাধিক চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সেনা ও নৌবাহিনীর অফিসার পরিচয়ে সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি পাইয়ে দিতে প্রথমে চাকরিপ্রত্যাশী সংগ্রহ, পরে নির্দিষ্ট স্থানে ডেকে ভুয়া চুক্তিপত্র করে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। তবে চাকরিও হয় না, টাকাও ফেরত পান না ভুক্তভোগীরা। আর নেপথ্যে থেকে এই প্রতারক চক্র পরিচালনা করে আসছিলেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত নজরুল ও নৌবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মাসুদ রানাসহ বেশ কয়েকজন।


বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক বরাবর অভিযোগ করে জানান, সামরিক বাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষার জন্য কিছু প্রশ্নপত্র ও সমাধান দিয়ে স্ট্যাম্প ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ৮ লাখ টাকা দিতে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেয় প্রতারক চক্র। নিয়োগপত্র পেলে ৪ লাখ এবং চাকরিতে যোগদানের পর বাকি ৪ লাখ টাকা পরিশোধের শর্তে জামানত হিসেবে চেক ও স্ট্যাম্প জমা রাখতে বলা হয়। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য র‌্যাবকে অনুরোধ জানায় ভুক্তভোগীরা।

অনুসন্ধানকালে তথ্য-প্রযুক্তি প্রয়োগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগের সত্যতা পাবার পর শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকার মোহাম্মদপুরে বছিলা গার্ডেন সিটি মোহাম্মদিয়া বেকারি সংলগ্ন একটি বাড়ি থেকে চক্রের সদস্য নজরুল ইসলাম ওরফে মানিক (৫৩), ফারুক হাসান (৩৮), আবুল কাশেম (৬০), সাইফুল ইসলাম (২৫) ও মাসুদ রানা (৩২) নামে পাঁচজনকে আটক করে র‌্যাব-২ এর একটি দল।

এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ৪ কোটি ৯৮ রাখ ৫৩ হাজার ৮০ টাকার ৮৬টি চেক, ৬২টি ৩০০ টাকা মূল্যের স্বাক্ষরিত কিন্তু অলিখিত নন-জুড়িসিয়াল স্ট্যাম্প, সেনাবাহিনীতে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১০টি মোবাইল জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, প্রতারকরা নিজেদের কখনও কখনও ভুয়া মেজর, ভুয়া ক্যাপ্টেন, ভুয়া ডিবি, পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। আটকরা ভিন্ন ভিন্ন জেলার বাসিন্দা হলেও একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচিত।

তারা বিগত ৪/৫ বছর যাবত সামরিক বাহিনীতে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা/কর্মচারীর পরিচয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাততেন। চাকরি দেয়ার প্রলোভন ও ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে জামানত হিসাবে মোটা অংকের ব্যাংক চেক, স্বাক্ষরিত (অলিখিত/লিখিত) স্ট্যাম্প ও নগদ টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।

তিনি বলেন, আটকদের মধ্যে নজরুল সেনাবাহিনীর এবং মাসুদ রানা নৌবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য। তারা নিজেদের সামরিক বাহিনীর অফিসার হিসাবে পরিচয় দিয়ে সাইদুর, ফারুক ও কাশেমসহ ৯/১০ জনের একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে চাকরি প্রার্থীদের সংগ্রহ করে। এরপর আটক ফারুকের বাসায় ডেকে প্রতারণার মাধ্যমে নগদ টাকা, ব্যাংক চেক এবং স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।

আটক সাইদুল ও মাসুদ রানা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য চাকরি প্রার্থীদের ভুয়া প্রশ্নপত্র ও সমাধান দেখান। কখনও আগাম হাতে তুলে দেন ভুয়া নিয়োগপত্রও। এরপর চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে চুক্তিপত্র করেন। নেন নগদ টাকা।

গত ৪/৫ বছরেব পাঁচ শতাধিক সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীর সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ২৫ কোটি টাকা। চাকরিপ্রত্যাশী ও ভুক্তভোগী পরিবার যাতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারে সেজন্য তাদের কাছ থেকে নেয়া ব্যাংক চেক ও নন জুড়িসিয়াল স্ট্যাম্পকে জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

এসপি মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের চেষ্টার অপরাধে আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পলাতকদের ধরতে চলছে অভিযান।

নতুনসময় / আইআর