শুভ দিনের প্রত্যাশায় বর্ষবরণ

অনাচারের বিরুদ্ধে নতুন নিদের প্রত্যাশায় রাজধানীর ঐতিহাসিক রমনার বটমূলে চলে ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।
রোববার ভোর সোয়া ৬টায় এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। বর্ষবরণের ৫২তম এই আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য- ‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’।
সামাজিক সকল অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার মানস নিয়ে গানে গানে ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিলো ছায়ানটের শিল্পীরা। বর্ষবরণ ১৪২৬ রমনার বটমূল থেকে সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতার।
এদিকে, ছায়ানটের আয়োজনে শামিল হতে ভোরেই রমনার বটমূলে নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে। তাদের পরনে ছিল রঙিন পোশাক। তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ জানান দিচ্ছিল যে তারা এই উৎসবে একাত্ম।
রমনার এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়। রমনায় প্রবেশের ক্ষেত্রে করা হয় তল্লাশি।
আয়োজনে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানার আগে ছায়ানট সভাপতি সানজীদা খাতুন শুভবোধ জাগরণের আহ্বান জানাবেন তার কথনে।
তিনি বলেন, আজ ১৪২৬ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ। বৎসরকাল পেরিয়ে আমরা আবার নতুন দিনের মুখোমুখি। কেমন সময় পেরিয়ে এলাম? চোখ মেললে কিংবা কান পাতলে নিত্যই শিশু, নারী, বল-ভরসাহীন মানুষ তথা সমগ্র মানবতার উপরে নির্মম আচরণের সংবাদ, নিয়ত মার খাচ্ছে সমাজের ধারণা। কোথায় যাচ্ছি? নিষ্কলুষ শিশুসন্তান কোনো সমাজবাসীর অত্যাচারের শিকার হয় কী করে? সমাজ কি পিতামাতা, ভাইবোন, সন্তানসন্ততির গৃহ আর প্রতিবেশী নিয়ে গঠিত শান্তি-নিবাস নয়? স্বার্থান্বেষী অমানুষদের আত্মসুখ সন্ধানের ফলে নির্যাতনের হাত থেকে পরিত্রাণ পায় না পরিবার, সমাজের কচিকাঁচা থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, সমাজের কোনো মানুষ। কিছু মানুষ কি পাষণ্ড হয়ে উঠল? নববর্ষ যদি ভ্রাতৃত্ববোধ-মানবতাবোধের উন্মেষ না ঘটাতে পারে, তবে নতুন দিন কি বার্তা নিয়ে আসে?
অন্তরে ইচ্ছা জাগুক, ‘ওরা অপরাধ করে’ কেবল এই কথা না বলে, প্রত্যেকে নিজেকে বিশুদ্ধ করবার চেষ্টা করি। আর, আমরা যেন নীতিবিহীন অন্যায়-অত্যাচারের নীরব দর্শকমাত্র হয়ে না থাকি। প্রতিবাদে, প্রতিকার সন্ধানে হতে পারি অবিচল। নববর্ষ এমন বার্তাই সঞ্চার করুক আমাদের অন্তরে। শুভ হোক নববর্ষ!