ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪শে জুন ২০২৫, ১০ই আষাঢ় ১৪৩২


সব হত্যা সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নয়: বিজিবি প্রধান


৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:২৭

সীমান্ত এলাকায় সংঘটিত সব হত্যাই সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নয়

সীমান্ত এলাকায় সংঘটিত সব হত্যাই সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নয় বলে মন্তব্য করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম। বলেছেন, সীমান্তে কোনো হত্যাকাণ্ডই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের কারণে ঘটিত হত্যাকাণ্ড সীমান্ত হত্যা নয়।

বুধবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে 'সীমান্ত ডাটা সেন্টার’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘বেশিরভাগ বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ড ঘটছে ভারতীয় সীমান্তের ১০-২০ কিলোমিটার ভেতরে। নো ম্যানস ল্যান্ডের মধ্যে বাংলাদেশের ১৫০ গজ ও ভারতের ১৫০ গজ এলাকায় হত্যা হলে সেটাকে সীমান্ত হত্যা বলা যাবে। অন্যথায় সেগুলো হত্যাকাণ্ড।’

‘কোনো হত্যাকাণ্ডই গ্রহণযোগ্য নয়। বিজিবি প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। ভারতীয় সীমন্তরক্ষী বাহিনীও আমাদের আশ্বস্ত করেছে।’

২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সীমান্তে মাত্র একজন বাংলাদেশি মারা গেছেন জানিয়ে বিজিবি প্রধান বলেন, সেটা বেড়ে এখন আটজনে দাঁড়িয়েছে। সিলেট সীমান্তে খাসিয়ারা রয়েছেন। বাংলাদেশিরা যখন অবৈধভাবে ঢুকছেন, তখন শুধু ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরাই নন, খাসিয়ারাও তাদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করছেন।’

মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, সামান্য কিছু টাকার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী ভারতীয় সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেন। আবার কিছু মানুষের আত্মীয়-স্বজন সীমান্তের ওপারে আছেন, যারা অবৈধভাবে যাওয়া-আসা করেন। যারা কোনো আত্মীয়ের অনুষ্ঠান বা বিশেষ কোনো কারণে অংশ নিতে চান, তখন আমাদের বললেই সে ব্যবস্থা করে দেই। বিএসএফও সেটা অ্যালাউ করে। আমাদের মধ্যে সে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তবে আমাদের নাগরিকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে।’

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা স্বত্ত্বেও কেন হত্যাকাণ্ড ঘটছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ওদের ব্যাটালিয়নে পরিবর্তন হয়। অন্য সীমান্ত থেকে এখানে এসে অনেকে তা অনেক সময় বুঝতেও পারেন না। তবে, সীমান্তের এসব সমস্যা সমাধানে তারা আন্তরিক।

আভিযানিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও গতিশীল এবং আরো দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করতে পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরে ‘সীমান্ত ডাটা সেন্টারের’ উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রথমবারের মতো স্থাপিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই সেন্টার থেকে সংস্থাটির নিজস্ব ওয়েবসাইট হোস্টিংসহ বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এক্সচেঞ্জ সার্ভিস, বিজিবির নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে রিক্রুটিং সার্ভিস, অডিও ও ভিডিও কনফারেন্স সার্ভিস এবং ডিএমআর। সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারিসহ যোগাযোগে রয়েছে বর্ডার সার্ভেল্যান্স সিস্টেম, পেট্রোল ট্র্যাকার সিস্টেম, বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, বিজিবি মেইল সার্ভিস, এ্যাকটিভ ডাইরেক্টরি ইত্যাদি।

সীমান্ত ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে বিজিবির সকল আইটি অ্যাপ্লিকেশন ও সিস্টেম কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই সেন্টার স্থাপনের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল সক্ষমতা অর্জনের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল সীমান্ত রক্ষা বাহিনীটি।

প্রাকৃতিক বা অন্য কোনো কারণে দুর্ঘটনাবশত এই ডাটা সেন্টারের কোনো ক্ষতি হলেও এতে কোনো ডাটা যেন নষ্ট না হয়, সে লক্ষ্যে আরও বৃহৎ কলেবরে যশোরে একটি ডাটা রিকোভারি সাইট স্থাপনের কার্যক্রমও চলমান।
বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক, সীমান্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সীমান্ত ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।