ঢাকা শনিবার, ২১শে জুন ২০২৫, ৭ই আষাঢ় ১৪৩২


প্রধানমন্ত্রীর নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা, ৫ গ্রেফতার


১৮ জানুয়ারী ২০১৯ ০২:৩৯

ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং জাতীয় নেতাদের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার ঘটনায় পাঁচজন সাইবার অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা।


বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

বুধবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও জাতীয় নেতাদের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার অভিযোগে ফারুকসহ (৩০) পাঁচজনকে আটক করেছে ‌র‌্যাব-২। আটককৃতরা হলো- মো. সাব্বির হোসেন (২৪), মো. আল আমিন (২৭), মো. আমিনুল ইসলাম আমিন (২৫) ও মো. মনির হোসেন (২৯)। এসময় তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ভিন্ন ভিন্ন মডেলের ১২টি মেবাইল ফোন ও ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।


মুফতি মাহমুদ খান বলেন, (গত ১১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত একটি প্রেস রিলিজে আমরা জানতে পারি কিছু কুচক্রী মহল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে কিছু ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট/পেজ থেকে নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক, মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য-সংবাদ প্রচার হচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে অফিসিয়ালি কোনো ফেসবুক পেজ নেই।

এই তথ্যের ভিত্তিতে ফেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ও তাদের মূল হোতাদের আইনের আত্ততায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র‌্যাব-২। পরে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মগবাজার, ডেমরা, মেহাম্মদপুর, ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জ ও সাভার এলাকা থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়।

মুফতি মাহমুদ বলেন, আটক সাইবার অপরাধী মো. ওমর ফারুক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার নিজ নামে ছয়টি ফেসবুক আইডি আছে। সেসব আইডির বিপরীতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ছয়টি পেজ ব্যবহার করতেন। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে একটি, আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন জাতীয় নেতাদের নামে সর্বমোট ৩৬টি পেজ তিনি চালাতেন।

এছাড়া,তিনি তার পরিচালিত সব ফেসবুক পেজে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছেন। সেসব পেজে নিজেকে আওয়ামী লীগের বিশেষ এজেন্ট দাবি করে আসন্ন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

সাব্বির হোসেন পেশায় সাইবার কমিউনিকেশন এক্সপার্ট। সাব্বির সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা দু’টি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে চারটিসহ মোট ছয়টি মামলার আসামি। তিনি আগে তারেক জিয়া সাইবার ফোর্স, দেশ নেত্রী সাইবার ফোরাম পেজের অ্যাডমিন ছিলেন। সম্প্রতি সেসব পেজের জায়গায় শেখ হাসিনার পরামর্শ ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নাম সংযোজন করে তাতে নিরাপদ সড়ক চাই ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের উসকানিমূলক ভিডিও পোস্ট করতেন। সাব্বির যে কোনো নতুন ইস্যু কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী অপপ্রচার চালাতেন।

মুফতি মাহমুদ আরো জানান, আল আমিন পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি সাইবার অপরাধে সম্পৃক্ত একটি পেজের অ্যাডমিন। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য জাতীয় নেতাদের ছবি বিকৃত আকারে প্রকাশ করতেন। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, পুলিশকে ঘিরে মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশ করে তাতে ভুয়া ছবি সুপার অ্যানিমেশনের মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট করতেন।

পেশায় ছাত্র আমিনুল ইসলাম আমিন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য। তিনি ইউটিউবে বিভিন্ন কমিক আইটেম প্রচার করেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মোট চারটি ও ফেসবুক পেজ তিনটি।

মনির হোসেন গত ৭/৮ বছর ধরে ফেসবুক ব্যবহার করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে কেরানীগঞ্জ থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার নামে তিনটি ফেসবুক আইডি ও চারটি পেজ রয়েছে। তিনি সত্যের বিস্ফোরণ নামে একটি পেজের অ্যাডমিন। মনির হোসেন তার ফেসবুক আইডি ও পেজ থেকে রাজনৈতিক অপপ্রচার, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও বিভান্তিমূলক তথ্য প্রচার করতেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আটক আসামিদের মধ্যে দু’জনের নামে ইতোমধ্যে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে, অন্যরা আরো কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিনা জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।

/আনু