ঢাকা শুক্রবার, ২০শে জুন ২০২৫, ৭ই আষাঢ় ১৪৩২


অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভেঙে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট !


১৪ জানুয়ারী ২০১৯ ০৬:০৯

অভ্যন্তরীণ কোন্দোলে ভেঙে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট !

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণফোরামের সভাপতি ড.কামালের নেতৃত্বে গঠিত জোট “ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট” ভাঙ্গনের সুর শোনা যাচ্ছে। ড. কামাল নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে।

শুধু ঐক্যফ্রংন্ট নয় বিএনপিতেও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্ব মানতে নারাজ অনেকেই। জানা গেছে নির্বাচনের পর থেকে কোনো সভায় অংশ নেননি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদসহ অনেকেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নিজেদের অভ্যন্তরীন কোন্দল থেকেই বেড়িয়ে আসতে পারেনি ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনে এমন পরাজয়ের জন্য দোষারোপ করছে একে অপরকে। নির্বাচনের একদিন আগেও মওদুদ আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর ফাঁস হওয়া ফোনালাপে মির্জা ফখরুলের সিদ্ধান্ত ও আচরণ নিয়ের দুইজনের রাগান্বিত ভাব প্রকাশ পায়।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, জামায়াতের সাথে ঐক্যের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। ঐক্য রক্ষা করতে হলে বিএনপিকে জামায়াতকে বাদ দিতে হবে ।

তৃনমূল পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ড. কামাল ও মির্জা ফখরুলের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই এমন ভরাডুবির শিকার হয়েছি আমরা। ড. কামাল এখন জামায়াতকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে এসব কথা তিনি কেন বলেননি ? ড. কামাল বিশেষ একটি মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন বলেও মনে করছেন অনেকেই।

ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগে থেকেই লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)'র চেয়ারম্যান ড. কর্ণেল (অব.)অলিসহ ২০ দলীয় জোটের অনেক নেতাই ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনা করে আসছিলেন। নির্বাচনের সময় তারা নীরব থাকলেও এখন আবারো ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন তারা।

ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতারা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকেও অবিশ্বাস করছেন। তাই তার দলের দুই বিজয়ী নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ নেয়ার পক্ষে। কিন্তু বিএনপির নেতাদের আশঙ্কা, ফ্রন্টের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গণফোরাম সিদ্ধান্ত নিলে স্বাভাবিকভাবেই ঐক্যফ্রন্টের ঐক্যে প্রভাব পড়বে এবং দলে ভাঙনের ফলে দুই ভাগ হয়ে যাবে। যার কারণে গত ২ জানুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনে বিজয়ী ৭ নেতার শপথ গ্রহণের বিষয়ে বিরোধিতা করেন, যার চাপ গিয়ে পড়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপরে। পরে বিএনপিসহ ফ্রন্টের শরিক দলগুলো যুক্তি ও চাপের ভিত্তিতে বিবেচনা করে আপাতত শপথ গ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ঐক্যফ্রন্ট্রের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন।

গত রবিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের শপথ এখন নেয়া হচ্ছে না। আমি স্পষ্ট করে বলছি, গণফোরামের কোনো সদস্য শপথ নিচ্ছেন না।

তবে এ বিষয়ে গণফোরামের দুই নেতা দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মো. মনসুর বলেন, আমি বৈঠকে ছিলাম না। এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন আমাদের নেতা। তিনি বলার পর আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পর গণফোরামের দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তির কোথাও শপথ না নেয়ার কথা উল্লেখ নেই। এমনকি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বৈঠকের পর যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সে বিষয়টিও আমার জানা নেই। গণফোরামের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পড়ে শুনিয়ে তিনি দাবি করেন, ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. কামাল হোসেনের স্বাক্ষর নেই। মোকাব্বির বলেন, ঐক্যফ্রন্টের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এর দায় গণফোরামের কাছে। সুতারাং শপথ নেয়া বা নেয়ার বিষয়ে গণফোরামের সঙ্গেই বোঝাপাড়া করব।

সূত্র জানায়, নির্বাচনের পরে নতুন ঘুরে দাঁড়াতে মাঠের কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। আপাতত দেশব্যাপী বিক্ষোভ, অবস্থান ও গণসংযোগের মতো কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা ও তৈরি করা হয়েছে। যেখানে নির্বাচনে ব্যাপক ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে দেশব্যাপী গণসংযোগ করেছে নেতারা। জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরসভায় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে উৎসাহিত করবেন তারা। শুধু স্বল্পসময়ের নয়, লাগাতার কর্মসূচিতে থাকতে চাইছেন বিএনপির জামানত হারানো সিনিয়র নেতারা। আজ মঙ্গলবার দলের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবনাটি হাতে নিয়েই জোটের নেতাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করবেন তারা। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আসতে পারে জোটটির পক্ষ থেকে।