বরগুনার পাথরঘাটায় জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম

বরগুনার পাথরঘাটায় জেলেদের ভিজিএফ কার্ডের চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। চোখের সামনে মাপে অনিয়ম সত্বেও খাদ্য গুদামের কর্তৃপক্ষের সাফাই করছেন জনপ্রতিনিধিরা। প্রতি জেলেকে ৮০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৮ কেজি এমন অভিযোগ উপকার ভোগী জেলেদের। এগুলো যেন দেখেও দেখছে না কেউ।
সোমবার সকাল পাথরঘাটা খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা যায়, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের ২৫শ কার্ড ধারি জেলেদের মাঝে বিজিএফ এর চাল বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতি জেলেকে ৮০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও জেলেদের চাল দেওয়া হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৮ কেজি।
একাধিক জেলের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরা সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা মেনে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। আমাদের সংসার চলে না। সন্তানদের নিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে আছি। এরপর ৮০ কেজির চালের মধ্যে প্রত্যেক জেলেকে দুই থেকে পাঁচ কেজি চাল কম দিচ্ছে।
পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে জানা যায়, এবার পাথরঘাটা ১১ হাজার ৪শ ১১ জেলেকে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা ৮০ কেজি চাল বিতরণ করা হবে।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন মোল্লা জানান, পাথরঘাটায় ১১ হাজার ৪শ ১১ জেলেকে পাথরঘাটা খাদ্য গুদাম থেকে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এতে প্রতি জেলেই চাল কম পাচ্ছে। তিনি জানান প্রতি জেলে যদি কম হলেও দুই কেজি চাল কম পায় তাহলেও ২২ টন চাল গায়েব হয়ে যায়।
জেলেরা জানান, বিগত সরকারের আমলেও আমরা চাল কম পেয়েছি। এখন কম পাচ্ছি। তাহলে চাল চোর কি সবসময়ই থাকবে?
জেলে ইউনুস মাঝি জানান, নতুন সেলাই করা বস্তায় আমাদের চাল দিচ্ছে। এখানে প্রতি ৫০ কেজির বস্তার ওজন সহ থাকার কথা ৫০ কেজি ৩শ গ্রাম। সেখানে হচ্ছে ৪৮ কেজি ৪৭ কেজি। ৩০ কেজির বস্তাতেও একই ভাবে কম হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে থাকা পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছগির হোসেন, ইউপি সদস্য শাহ আলম সহ মোঃ বাদল ও জনপ্রতিনিধিরা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের পক্ষে কথা বলছেন। তারা বলছেন দেশে কোন কিছুই তো শতভাগ হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার ডাকুয়ার যোগসাজশে চাল কমিয়ে নতুন করে বস্তা সেলাই করা হয়। এইসব কম ওজনের চালের বস্তা জন প্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে বিতরণ করা হয়। তাই জন প্রতিনিধিরা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের পক্ষে থেকেই জেলেসহ বিভিন্ন উপকার ভোগীদের ঠকিয়ে আসছে।
এবিষয়ে পাথরঘাটা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার ডাকুয়া বলেন, কোন বস্তাতেই ওজন কম হচ্ছে না। জাহাজ থেকে চাল উঠানোর সময় বস্তা থেকে অনেক চাল পরে যেতে পারে। এ কারনে বস্তায় চাল কম পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাথরঘাটা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার অঞ্জন কুমার ডাকুয়ার বিরুদ্ধে ঈদল ফিতর উপলক্ষে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দের ১০ কেজির চালের বিপরীতে ৮ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম করে বিতরণের অভিযোগ রয়েছে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়াও পাথরঘাটা খাদ্য গুদামে আমন চাল সংগ্রহে কয়েক ধাপে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এর আগে ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি অঞ্জন ডাকুয়া বরগুনার আমতলীতে উপখাদ্য পরিদর্শক থাকা অবস্থায় ধান ক্রয়ে দুর্নীতি করায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১৯৫ বস্তা ধান জব্দ করে ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন তাকে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, চাল চুরির বিষয়টি জানার পরে দায়িত্বরত কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার ডাকুয়াকে গালিগালাজ করেছি। পরবর্তীতে এমন কাজ করবে না বলে ক্ষমা চেয়েছেন অঞ্জন ডাকুয়া।
এম সাইফুল ইসলাম
বরগুনা