জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কাজে জড়াবে না সেনাবাহিনী

জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না বলে জানিয়েছেন লে. কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
সোমবার সেনা সদরের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা।
"যেভাবে বলা হচ্ছে, সরকারের সাথে সেনাবাহিনীর বিশাল মতপার্থক্য হয়েছে, বিভেদ হয়েছে। যেটা দেখছি মিডিয়াতে...এরকম আসলে কিছু হয়নি। সরকার এবং সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করছে। সুতরাং এটা নিয়ে মিস ইন্টারপ্রেট (ভুলভাবে ব্যাখ্যা) করার কোনো সুযোগ নেই," সাংবাদিকদের বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা।
তিনি আরও বলেন, "আমরা যেন এটাকে এমনভাবে না দেখি যে, সরকার এবং সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করছে বা একে অপরের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কখনোই নয়। সরকার সেনাবাহিনী একই সাথে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে আরও সুন্দরভাবে কাজ করে যাবো বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।"
লে. কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘করিডোর, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব ইস্যুতে সেনাবাহিনী আপোষহীন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সবার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।’
মব তৈরির বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ যদি মব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা করতে চায়, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সেনাবাহিনী।’
চট্টগ্রামের একটি কারখানায় কেএনএফের পোশাক উদ্ধারের বিষয়ে লে. কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘটনাটি উদ্বেগজনক। সেনাবাহিনী গভীরভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।’
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আমাদের যতক্ষণ শক্তি থাকবে সীমান্তে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কাজ করব। আরসা বাহিনী অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছে। এটা উদ্বেগের বিষয়। সীমান্ত পরিস্থিতি এখন বেশ সংবেদনশীল, আমরা সতর্ক আছি।
সীমান্তে পুশইন কোনোভাবেই কাম্য নয় জানিয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আমরা বসে থাকবো এটা ভাবার কারণ নেই। এই পরিস্থিতি বিজিবিই নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের সহায়তা লাগলে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সেখানে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে পশুর হাটে চাঁদাবাজি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট থাকবে সেনাবাহিনী। ঈদে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে দুই সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগস্ট হতে এই পর্যন্ত সর্বমোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এই পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
গত ২০ মে ভাষানটেক এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে চারটি বিদেশি পিস্তল, ২৮ রাউন্ড গুলিসহ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিটলু বাবুসহ তার গ্যাংয়ের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।
বিগত ৪০ দিনে যৌথ অভিযানে ৪৮৭ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং আগস্ট হতে এই পর্যন্ত মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট ৪ হাজার ৪শ’ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন-ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত শিল্পাঞ্চল এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।