ঢাকা বুধবার, ২১শে মে ২০২৫, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দিল অব্যাহতি, হান্নান মাসউদের জিম্মায় ছাড়া পেলেন ৩ জন


২০ মে ২০২৫ ২১:৩০

ফাইল ফটো

হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার বাসায় মধ্যরাতে ঢোকার চেষ্টার সময় আটক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। এদিকে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে গতকাল সোমবার রাতে থানা হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁকে সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে ওই তিনজনকে থানা হেফাজত থেকে নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ

 

প্রায় ১৩ ঘণ্টা থানায় আটক থাকার পর মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈনু।

 

ওসি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ ও তাদের পরিবারের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

ছাড়া পাওয়া তিনজন হলেন- মোহাম্মদপুর থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি, ঢাকা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্য সচিব ফারহান সরকার ডিনার ও মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও ট্রাফিক সহায়ক মোহাম্মদ জিসান উল্লাহ।

 

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার ডিসি মাসুদ আলম সমকালকে বলেন, আটক তিন সমন্বয়ককে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর যদি আর কখনও এ ধরনের কাজে জড়িত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পুলিশ জানায়, সোমবার রাত ১১টার পর সিভিল পোশাক পরিহিত একদল লোক ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের ৩৬/১ এর হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে ‘আওয়ামী দোসরদের ঠাঁই নাই’ বলে নানা স্লোগান দেন। এরপর বাসার দারোয়ানকে ধাক্কা দিয়ে চতুর্থ তলার বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেন তারা।

 

পরে ৯৯৯-এ কল করে পরিস্থিতি জানিয়ে অভিযোগ করার পর ঘটনাস্থলে আসে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী নেতারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করতে বলে। কিন্তু পুলিশের কাছে গোলাম মোস্তফা নিজেকে অসুস্থ দাবি করেন এবং রাতে দরজা খুলতে রাজি হননি। এছাড়া মামলা না থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার না করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান সেখানে থাকা উপস্থিত নেতারা। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঘটনাস্থলে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওই তিন নেতাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

 

এদিকে হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলছেন, আমি আওয়ামী লীগের কেউ নই। আমার জানামতে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। তবে আমি একজন পাবলিশার হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বা মতাদর্শের বই প্রকাশ করেছি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগেরও অনেক বই আমি প্রকাশ করেছি। শুধু আওয়ামী লীগ নয় বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর বইও আমি প্রকাশ করেছি।

 

তিনি বলেন, এটা তো আমার ব্যবসা। এজন্য আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বানিয়ে মধ্যরাতে বাসায় এসে দরজা ভাঙার চেষ্টা, দারোয়ানকে মারধর কিংবা মব সৃষ্টির চেষ্টা কেউ করতে পারে না।

 

এই ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানা শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য (দপ্তর সেল) মারজিউর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক জরুরি নোটিশে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে। 

 

জরুরি নোটিশে বলা হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।