ঢাকা বুধবার, ৭ই মে ২০২৫, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩২


শীতে বাড়ছে ডেঙ্গু, প্রস্তুতি কতদূর


২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:০৮

ফাইল ফটো

দেশের শীতকালীন সময়েও ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, যা এক নতুন সংকট তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতকালেও ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, যা রোগটিকে বছরের প্রতিটি সময়েই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৯৪ জনে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এ সময়ের মধ্যে মোট ৫৬৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। শুধু ডিসেম্বরে ২২ দিনের মধ্যে ৮ হাজার ৭২৫ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার জানিয়েছে, গত একদিনে ১৬৫ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং ২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ১৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী, যার মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৩ জন, এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৪৬ জন।

শীতে কেন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং মশার প্রজননস্থলগুলোতে অপর্যাপ্ত নজরদারি। সাধারণত, গ্রীষ্মকালেই ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করলেও শীতকালে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে এমন জায়গাগুলো- যেমন বহুতল ভবনের পার্কিং স্পেস, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট এবং বাড়ির ছাদে জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন ঘটছে। এছাড়া পরিবেশের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ডেঙ্গুর বিস্তার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

এদিকে শীতকালে মশার প্রজননস্থলগুলোকে টার্গেট করে মশা নিধন কার্যক্রমের অভাব এবং সঠিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৩ সালের ভয়াবহ পরিস্থিতি

২০২৩ সালে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ বছর মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এবং ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যান। ডিসেম্বরে ১ তারিখ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৭০ জন মারা যান।

জনসচেতনতার প্রয়োজন

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন থেকে ডেঙ্গুকে একটি বছরব্যাপী রোগ হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। শীতকালেও এডিস মশার প্রজননস্থলগুলোতে যথাযথ নজরদারি, জলাশয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মশা নিধন কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের একযোগে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

কী করা উচিত?

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন, যাতে সবাই বুঝতে পারে যে ডেঙ্গু এখন শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালীন রোগ নয়, এটি বছরের প্রতিটি সময়েই হতে পারে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে লড়াই করার জন্য সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।