অর্ধেক ইভিএম নষ্ট, মেরামতেই প্রয়োজন ১২শ কোটি টাকা
 
                                যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) একদিকে নষ্ট হচ্ছে ভোটযন্ত্রটি, অন্যদিকে নষ্ট ইভিএম মেরামত ব্যয় দাঁড়িয়েছে আকাশচুম্বি। তাই নানা আলোচনা সমালোচনা থাকলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই যন্ত্রটির প্রকল্পকে পুরোপুরি স্বনির্ভর করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বনির্ভর ইভিএম ইউনিটে থাকবে নিজস্ব ওয়্যারহাউজ, যেখানে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে যন্ত্রগুলোকে সংরক্ষণ করা হবে। থাকবে নিজস্ব জনবল। মেরামতে সক্ষমতা। ছোটখাটো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যাতে নিজস্ব জনবল দ্বারাই সম্পন্ন করা যায়, সে ব্যবস্থাও থাকবে।
জানাগেছে, এক-এগার সরকারের সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তৈরি করিয়ে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোটযন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরবর্তীতে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলে উন্নত মানের ইভিএম তৈরির সিদ্ধান্ত রেখে যায়।
২০১৭ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টেরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেন তারা। এতে মেশিন প্রতি ব্যয় হয় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প।
প্রকল্প থেকে দেড় লাখের মতো ইভিএম কেনে রকিব কমিশন। প্রকল্পের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যবস্থা না থাকায় সেই উন্নত মানের ইভিএম পাঁচ বছর যেতে না যেতেই অকেজো হওয়া শুরু করে। কন্ট্রোল ও ব্যালট ইউনিট মিলে একটি সেট, যা একটি ইভিএম হিসেবে ধরা হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এসে প্রায় প্রতিটি সেটেই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অবশিষ্ট এক লাখ ১০ হাজারের মেশিনের মধ্যে অধিকাংশগুলোতে ধরা পড়ে নানা ধরনের ত্রুটি। কিন্তু মেরামতের জন্য নেই অর্থের যোগান। ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। অকেজো মেশিন মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য সাড়ে ১২শ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে বৈশ্বিক অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার সেটি নাকচ করে দেয়। বর্তমানে সেই ইভিএমগুলো পুরোপুরি বাতিল হয়ে গেছে, যা কমিশন পুড়িয়ে ফেলার চিন্তা করছে।
ইসি সচিব শফিউল আজিম এবিয়ে বলেন, যে কোনো প্রযুক্তি প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু কর হয়। এটি নির্ভর করে জন আকাঙ্ক্ষা ও তাদের মতামতের ওপর। আমরা এতটুকু বলতে পারি পরবর্তী যে নির্বাচনগুলো আছে, আমাদের কাছে রাত-দিন অনুরোধ আসছে, আমরা যেন ইভিএমে নির্বাচনগুলো করি। পরবর্তীতে স্থানীয় নির্বাচনগুলো ইভিএমে হবে। একটি নতুন প্রযুক্তির প্রতি মানুষের অনেক জিজ্ঞাসা থাকে। আমরা চেষ্টা করছি তৃণমূল পর্যায়ে মানুষ যাতে এটি নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারে। যারা এটার বিশেষজ্ঞ আছেন, যারা এটার সুবিধাভোগী আছেন, আমরা ব্যবহারকারী যারা আছি, সবাই এটা নিয়ে কাজ করছি। এখানে আরো কোন ধরনের নতুন ফিচার যোগ করা যায়, আরো কিভাবে নির্ভরযোগ্য করা যায়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কিভাবে হচ্ছে, গ্লোবালি এটা গ্রহণযোগ্যতা কেমন এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটা যেহেতু প্রকল্প ছিল, তাই পররবর্তী এক বছর কোনো অর্থ বরাদ্দ ছাড়া মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা কমিশনের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। মেয়াদটা যদি বাড়ানো হয়, ইভিএমে কিভাবে আস্তে আস্তে আরো উদ্ভাবনে যাবো, কমিশনের নিজস্ব জনবল তৈরি, এটা কিভাবে সংরক্ষণ, কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করবো এবং এটার কারিগরি দিক কিভাবে সফলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারি, সবকিছুই আমরা এক বছর পেলে তার মধ্যেই ঠিকঠাক করে ফেলবো। পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা আশা করছি বরাদ্দ পেয়ে যাবো।
অর্ধেকের মতো ইভিএম নষ্ট হয়ে গেছে। মেরামত করতেই ১২শ কোটি টাকার মতো প্রয়োজন। খরচ অনেক বেশি মনে হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, খরচ কিভাবে কমানো যায়, রক্ষণাবেক্ষণ কিভাবে আমরা নিজেদের লোকবল দিয়ে করতে পারি, সবই আমাদের বিবেচনার মধ্যে থাকবে। ইভিএম সংরক্ষণের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, আমরা সংরক্ষণ, মেরামত, টেকনলজি ট্রান্সফার, নিজস্ব জনবল তৈরি এই সব কিছু নিয়ে কাজ করছি। আমরা ইতিমধ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে জমি চেয়েছি। আমরা আশাকরি পেয়ে যাবো। এতে আমাদের নিজস্ব অবকাঠামো, নিজস্ব ওয়্যারহাউজ এবং আমাদের সম্পূর্ণ একটা আলাদা ইউনিট হবে। ইভিএম বা নির্বাচনী উপকরণ যাতে সংরক্ষণ করতে পারি, যেন আমাদের ক্যাপাসিটি থাকে, পাশপাশি আমাদের নিজস্ব জনবল যাতে প্রাথমিক মেরামত, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি মেরামত যাতে করতে পারে তার প্রযুক্তিগত দিক ও প্রশিক্ষণ পরবর্তী এক বছরে ব্যবস্থা করবো। আপাতত জেলা প্রশাসকের কাছে জমি চেয়েছি। সেটা পেলে আামরা এটিকে ওয়্যারহাউজ হিসেবে ব্যবহার করবো। সম্পূর্ণভাবে একটি স্বনির্ভর ইউনিট হিসেবে তৈরি করবো। এটি আমাদের পরিকল্পনা মধ্যে রয়েছে।

 
                 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                        -2024-09-02-09-55-40.jpg) 
                                                         
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            