নতুন নোট, এক হাজার টাকার দাম ১৩০০!
চকচকে টাকার নোট পেলে কে না খুশি হয়। দুই টাকা থেকে শুরু করে একশ টাকার নোট ছোট-বড় সবার কাছেই প্রিয়। অনেকেই নতুন টাকার চকচকে নোট খরচ না করে গচ্ছিত রেখে দেন মানিব্যাগের এক কোণে।
ছোটরা তো নতুন দুই-পাঁচ টাকার নোট পেলেই মহাখুশি। ঈদ এলে নতুন নোটের কদর অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
রাজধানীর কয়েকটি স্থানে দেখা মিলবে অদ্ভুত এক হাটের, যেখানে বেচাকেনা হয় টাকা। গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের সিঁড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম সাইডে বসে এই টাকার হাট।
এছাড়া মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের উত্তর গেটের পাশে বেচা-কেনা হয় নতুন টাকা। যে কেউ পুরান টাকা দিয়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু টাকা বেশি দিতে হয়। এখানে ছেঁড়া-ফাটা টাকাও চেঞ্জ করে নেওয়ার সুযোগ আছে।
প্রায় সারা বছরই এখানে নতুন টাকা বেচাকেনা হয়ে থাকে। তবে ঈদের সময় জমে উঠে এই বাজার। এসময় মানুষ এখান থেকে নতুন টাকা নিয়ে গিয়ে প্রিয়জনদের উপহার দেন। কেউ নতুন টাকা দিয়ে ঈদ সেলামি দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলিস্তানের ব্যস্ততম এই এলাকায় দুই টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা নোটের বান্ডিলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এখানে কোনো লোক এলেই হাঁকডাক দিচ্ছেন তারা।
অনেকেই নতুন টাকা সংগ্রহ করতে দরদাম করছেন। বিকেলের দিকে এই বাজার বেশ জমে উঠে। ঈদকে সামনে রেখে জেমে উঠেছে এই বাজার।
ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে ছেঁড়া টাকা চেঞ্জ করে দেওয়া হয়। যারা এই ছেঁড়া টাকা চালাতে পারে না তাদের কাছ থেকে টাকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে নোটগুলো কিনে নেওয়া হয়।
ঈদের আগ মুহূর্তে প্রতিদিন প্রতি দোকানির লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হয়। পাঁচ টাকা, ১০ টাকা, ৫০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি।
এবার ২০ টাকার নোটের একটি বান্ডেল (দুই হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২৫০ টাকায়। ১০ টাকার বান্ডেল (এক হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা বেশি অর্থাৎ এক হাজার ৩০০ টাকা। পাঁচ টাকার নোট ১০০টি নিলে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ১৫০ টাকা।
এছাড়াও হাজারে ৫০-১০০ টাকা বেশি দিয়ে ১০০ টাকার নোটের বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে। ৫০ টাকার নোট এক বান্ডেল (এক হাজার টাকা) নিতে হলে বাড়তি দিতে হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকা। দুই টাকার নোট ৬০০ টাকার বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়।
মোহাম্মদ পাটোয়ারী নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি এখানে অনেক দিন ধরে ব্যবসা করছি। প্রতিদিন টুকটাক কিছু বেচাকেনা হয়। ১০ টাকা ২০ টাকার বান্ডেল বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। ঈদের সময় সবথেকে বেশি বেচাবিক্রি হয়। তাই সারা বছর ঈদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।’
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘নতুন টাকার এ ব্যবসায় কোনো রকম সংসার চলে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে হাজারখানেক টাকা লাভ হয়। কোনো সময় একেবারেই হয় না। ঈদের আগে একটু বেশি বেচাকেনা হয়। এভাবেই চলছে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিদিন যে আয় হয় তার থেকে একটা অংশ লাইনম্যানকে দিতে হয়। তারা পুলিশ ও ফুটপাতের জায়গা বিক্রি করে এ টাকা নেয়। টাকা না দিলে ফুটপাতে বসতে দেওয়া হয় না।
সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফুটপাতে হকার বসার বিষয়ে কড়াকড়ির কারণে পথে বসার উপক্রম হয়ে পড়েছে এই টাকা ব্যবসায়ীদের। একটু ফাঁকা পেলে বসলেই পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা তাড়া করেন। তখন টাকায় ব্যাগ নিয়ে পালাতে হয় তাদের।
মাঝে মধ্যে হানা দেয় ছিনতাইকারী। তারা হঠাৎ করেই টাকার বান্ডেল নিয়ে দৌড় দেয়। এছাড়াও এভাবেই ইঁদুর বেড়াল খেলার মতো চলে এই টাকার হাট।
জানা গেছে, প্রায় ৫০ বছর ধরে গুলিস্তানের এই এলাকায় এই হাটটি চলে আসছে। কম দামে টাকার বিনিময়ে নতুন টাকা, নতুন টাকার বিনিময়ে ছেঁড়া ও পুরান টাকা বিক্রি হচ্ছে এই ফুটপাতে।
এ স্থানটি ঘিরেই অর্ধশতাধিক মানুষ টাকা বেচা-বিক্রির ব্যবসা করছেন। এই ব্যবসা দিয়ে ঘর-সংসার চলে সবার। দুই টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত সবধরনের নোটের নতুন বান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে গুলিস্তানের এই ব্যবসায়ীদের কাছে।
নতুনসময়/এএম
টাকা, চকচকে নোট, মানিব্যাগ, রাজধানী, বাংলাদেশ ব্যাংক