ঢাকা শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১


ইউএনও'র বাসায় চুরির জন্য হামলা বিশ্বাসযোগ্য নয়


৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১৩

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার পেছনের রহস্য ও এর সঙ্গে জড়িত গডফাদারদের খুঁজে বের করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তার বাসায় চুরির ঘটনা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এসব কথা বলেন।

তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, জননিরাপত্তা সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, আইজিপি ড. বেনজির আহমেদসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

কক্সবাজারে মেজর (অব.) সিনহা হত্যা ও ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার বিষয়ে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে- জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, 'মেজর (অব.) সিনহা হত্যার তদন্ত যৌথভাবে হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে যাতে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ হয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। আর ইউএনওর বাসায় চুরির ঘটনা- এটা মানুষের কাছে বিশ্বসযোগ্য হয়নি। কী কারণে তার ওপর হামলা হয়েছে? এর নিন্দা জানানো হয়েছে। এর পেছনে আর কী রহস্য আছে, বা কারা গডফাদার সেটি দেখতে অধিকতর তদন্তের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, 'ইতিমধ্যে রাত্রিকালে ইউএনওদের বাসভবনে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজকে এটি সংশোধন করে পুরো উপজেলা কমপ্লেক্সেই নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। কারণ সেখানে আরও অফিসার থাকেন। অনেক অফিসারই পরিবার নিয়ে বাস করেন, তাদেরও নিরাপত্তার প্রশ্ন রয়েছে। সবগুলো পরিবার যাতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বোধ করেন, সেজন্য পুরো কমপ্লেক্সকে পাহারার আওতায় আনা হবে।'

ওয়াহিদার ওপর হামলায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ একজনকে আটক করলেও স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য প্রভাব খাটিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন- এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, 'কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যাকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে, তার সম্পৃক্ততা গোয়েন্দা সংস্থা খতিয়ে দেখছে। সে যদি জড়িত থাকে, তাকে প্রভাব খাটিয়ে ছাড় করিয়ে নেওয়া হয় এবং এতে এমপির সম্পৃক্ততা থাকে, তবে তিনিও আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন না।'

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সেখানে কিছু আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ আছে। এ কারণে রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে দ্বিধাবিভিক্ত হয়ে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ও অপরাধে জড়িত হচ্ছে। সেগুলোও নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত হচ্ছে। অচিরেই ভালোভালে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে। ২৪টি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে, সেখান থেকে যেন ২৪ ঘণ্টা তাদের কার্যক্রম মনিটর করা যায়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা দিয়ে তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে। '

মোজাম্মেল হক জানান, আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো স্ব স্ব গোয়েন্দা শাখার প্রধানের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে। সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমন্বয় করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। এতে সমস্যার প্রতিকার করতে সহজ হবে। সেজন্য সব গোয়েন্দা সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কমিটি গঠন করবেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'করোনা মহামারির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেহেতু মানুষের আয়-রোজগারের পথ কমে গেছে কাজেই অনেক লোকের হয়তো অপরাধের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমক্ষম হয়েছে।'

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, 'মাদকের অপব্যবহার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরও আরও উন্নত করতে হবে। তবে এর সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনও জড়িয়ে পড়ে। মাদকদ্রব্য যারা আনা-নেওয়া করে শুধু তাদের বিরুদ্ধে নয়, তাদের যারা আশ্রয়-প্রশয় দেয়, তাদেরও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরও বেশি মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হবে।'

মোজাম্মেল হক আরও বলেন, 'দেশে ৫০০-৭০০ এর বেশি বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। তাদের পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় তারা দেশে অবস্থান করছেন। এই বিদেশিচক্র টাকা পাচারসহ নানা ধরনের অপরাধ করছে। এরা বিক্ষিপ্তভাবে এখানে-সেখানে হোটেলে থাকে। পরিপূর্ণ তালিকা না থাকলেও একটা সন্তোষজনক তালিকা পুলিশ বিভাগের কাছে রয়েছে। তাদের সবাইকে নিয়ে একটা ক্যাম্প করা হচ্ছে। সেখানেই তাদের রাখা হবে। এরপর তাদের স্ব স্ব দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নিজেদের টিকিট কাটার সমর্থ্য না থাকলে সরকারি পয়সায় টিকিট কেটে তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'সাইবার অপরাধগুলো এখন খুব অ্যালার্মিং হয়ে গেছে। তাই ইউটিউব, ফেসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যগুলো জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। সাইবার অপরাধ দমনে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে সোশ্যাল মিডিয়াকে হেড কোয়ার্টারের মাধ্যমে মনিটর করা হবে। তবে কোনো সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে না।'