ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


তিন পণ্যের দাম বাড়ার কারণ


১৭ জুলাই ২০১৯ ১৯:৪৩

ছবি সংগৃহীত

তিন কারণে বাড়ছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আদা ও রসুনের উৎপাদন মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। নতুন করে ৫ শতাংশ উেস আয়কর আরোপ করায়ও এসব পণ্যের দামে প্রভাব পড়েছে। সর্বশেষ এসব পণ্য আমদানিতে ব্যাংক সুদের হার সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে আদা ও রসুনের দাম বাড়ছে স্থানীয় বাজারে।

আর ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি করায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এর সঙ্গে নগরে জলাবদ্ধতা ও গ্রামে বন্যা যোগ হওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় আগামী কোরবানির ঈদে এই তিন গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্যের বাজারে আরো অস্থিরতার শঙ্কা দেখছে ব্যবসায়ীরা।

এসব পণ্যের বাজার অবস্থা জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে গত ১১ জুলাই বৈঠক করেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ওই বৈঠকে এসব পণ্যের মূল আমদানিকারকরা উপস্থিত ছিল না। এতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদেরও ডাকা হয়নি। ফলে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণগুলো চিহ্নিত হয়নি; সমাধানও আসেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক কেজি রসুন চট্টগ্রাম বন্দর থেকেই কেনা পড়ছে ১৪০ টাকায়। সেই রসুন খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। গত মাসে খুচরাতেই এই রসুনের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা।

টানা ২০ বছর ধরে আদা ও রসুন আমদানি করছেন চট্টগ্রামের ফরহাদ ট্রেডিংয়ের মালিক নুর হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা কেমন বিচার। যে দেশগুলো থেকে রসুন আমদানি করা হয় সেখানে উৎপাদন শেষ হওয়ায় টনপ্রতি ৮০০ ডলারের রসুন কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৪০০ ডলারে। কাস্টমসে এসেসমেন্ট হচ্ছে এক হাজার ৪০০ ডলারের ওপর; ফলে দামও বেশি পড়ছে। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ করা হয়েছে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি)। গতকাল দুই কনটেইনার রসুনের শুল্ক দিতে হয়েছে সাত লাখ টাকা; আগে ছিল তিন লাখ টাকা। সর্বশেষ যোগ হয়েছে বাড়তি ব্যাংক সুদের হার। আগে ব্যাংক সুদের হার ছিল ১২ শতাংশ এখন নেওয়া হচ্ছে সাড়ে ১৪ শতাংশ।’

জানা গেছে, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার মতো নিত্যভোগ্যপণ্যের বাজার ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার অনেক আগে থেকেই কাস্টমস ডিউটি ছাড়া বাকি সব শুল্কহার প্রত্যাহার করেছে। এই কারণে এত দিন ধরে বাজার স্থিতিশীল ছিল। এমনকি গত রমজানেও বাজার অস্থির হয়নি। কিন্তু নতুন বাজেটে হঠাৎ করেই ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে এই আদা-রসুন আমদানিতে।

এসব ঝামেলার কারণে খাতুনগঞ্জের অনেক বনেদি ও মূল ব্যবসায়ী এখন আদা-রসুন আমদানি কমিয়ে দিয়েছে, আবার অনেকেই বন্ধ করে দিয়েছে। ফুলকলি গ্রুপ আগে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ কনটেইনার আদা-রসুন আমদানি করত; এখন প্রতিষ্ঠানটি ১৫ দিনে তিন কনটেইনার আমদানি করেছে।

ফুলকলি গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘অব্যাহত লোকসান এড়াতে এসব পণ্য আনা কমানো ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। এখন এগুলো বাদ দিয়ে অন্য পণ্য আমদানি করছি।’

এদিকে রমজানজুড়ে স্থিতিশীল থাকলেও এখন দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা চলছে। পেঁয়াজ রপ্তানি বাড়াতে ভারত সরকার কৃষকদের জন্য দেওয়া ১০ শতাংশ প্রণোদনা প্রত্যাহার করেছে এবং বাজেটে আমদানির ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করায় দেশে পেঁয়াজের বাজারে দাম বেড়েছে।

তবে পেঁয়াজ আমদানির ওপর থেকে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করায় বাজার কিছুটা সহনীয় হয়েছে দাবি করে খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, সে সময় এক সপ্তাহ বাজারে অস্থিরতা ছিল, এখন কিছুটা কমেছে। তবে বন্যার কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ট্রাকের সংকট রয়েছে, ভাড়াও বেড়েছে, এই কারণে দাম এখনো বাড়তি।