ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


ঝড় ও শিলা-বৃষ্টির কারণে আমের উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা


১৭ এপ্রিল ২০২১ ২৩:১৬

ছবি- নতুনসময়

আম প্রধান অঞ্চল হিসাবে খ্যাত রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় এ বছর আমের উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন অত্র এলাকার আম চাষীরা। তাঁরা বলছেন, বিগত দুই-তিন বছরের তুলনায় এবার বাগানে সবচেয়ে বেশি পরিমান মুকুল এসেছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে আকষ্মিক ঝড় এবং শিলা-বৃষ্টির কারণে অর্ধেকের বেশি পরিমান আমের গুঠি ঝরে পড়েছে। এর ফলে আম নিয়ে চরম হতাশা ও উৎকন্ঠায় রয়েছেন বাগান মালিকরা।

রাজশাহীকে আমের জন্য বিক্ষাত বলা হলেও আম প্রধান অঞ্চল মূলত জেলার চারঘাট-বাঘা ও চাপাইনবাবগঞ্জ-কে ঘিরে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঘার আমের সু-খ্যাতি সবচেয়ে বেশি বলে জানান আম ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, বিগত দুই বছর কতিপয় অসাধু ব্যাবসায়ীদের কারনে সরকারি ভাবে সময় বেধে আম পাড়া শুরু এবং বাজার মুল্য ভাল না পাওয়ায় আমের সাথে সম্পৃক্তরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। এ দিক থেকে যদি এ বছরও বাজার মূল্য ভাল না হয়-তাহলে আবারও আম চাষীদের মাথায় হাত পড়বে।

বাঘা উপজেলার আমোদপুর গ্রামের কৃষক মহাসিন আলী,বারঘাদিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ও চারঘাট উপজেলার মুংলী গ্রামের কৃষক মাইনুল ইসলাম জানান, এ বছর বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে গাছে অধিক পরিমান মুকুল এসেছিল। এরপর আমের গুঠি যখন ১ থেকে দেড় ইঞ্চি সাইজে দাড়ালো ঠিক সে সময়-অর্থাৎ গত সপ্তাহে আকষ্মিক কাল বৈশাখি’র হানা এবং শিলা-বৃষ্টিতে অর্ধেকের বেশি গুঠি ঝরে পড়েছে।

তাঁরা বলেন, পর-পর দুই বছর কৃষকরা আমে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এবার আম বাগানের প্রতি প্রত্যেকেই যত্নশীল ছিল। এ কারনে মুকুলও এসেছিল ভালো। কিন্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রত্যেক আম চাষী চরম দু:চিন্তায় পড়েছেন। তাঁদের মতে, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে আম কেনা-বেচা শুরু হয়। কিন্তু পর-পর দুই বছর ব্যবসায় লোকসান হওয়া-সহ বর্তমানে করনা মহামারির কারনে এবার কোন ব্যবসায়ী এখন পর্যন্ত আম কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কিংবা দেখালেও ভালো দাম বলছেন না।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, আমের জন্য অল্টারনেটিক ডিয়ার (বছর)ভ্যারি করে। অর্থাৎ এক বছর ভাল আম হলে অন্য বছর এমনি কম হয়। এ দিক থেকে গত বছর আমের উৎপাদন কম হওয়ায় এবার প্রচুর পরিমান আম ধরেছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে আকষ্মিক ঝড় এবং শিলা-বৃষ্টির কারনে কৃষকরা অনেকটায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাঁর মতে, আমের বাজার মুল্য ভালো থাকলে এ ক্ষতি পুশিয়ে যাবে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, বাঘায় আম বাগান রয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে। খাদ্য শস্যের পাশা-পাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে এখানে আমই প্রধান। প্রতিবছর বাঘা উপজেলার কৃষকরা শুধু আম বিক্রি করে অর্থ উপারজন করেন ৬ থেকে ৭ শ কোটি টাকা। অনুরুপ অর্থ উপারজন করেন পাশ্ববর্তী চারঘাট উপজেলার আম চাষীরা।

এই দুই উপজেলায় যেসব আম দেখা যায়, তার মধ্যে ফজলী, আশ্বিনী, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, আড়াজম, খিরসাপাত, লকনা, মহনভোগ, আতা, সেনরী, ফনিয়া, কাঁচামিটি, বুড়িরশাউনি, চরুশা, রানী পছন্দ, মহন ঠাকুর, তোতাপরী ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উলে¬খ যোগ্য। সম্প্রতি আম্রপালি, সহ কিছু বিদেশী প্রজাতির আম লক্ষ করা যাচ্ছে এ অঞ্চলে। এর মধ্যে অশ্চর্য হলেও সত্যি যে, বাঘার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চল এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন আম বাগান। চরের লোকজন জানান, তাদের এলাকার আম আবহাওয়া গুনে সুস্বাদু এবং টেকসই।